বাংলার ফুটবল উঁচুতে উঠলে তবেই ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি হবে। দীর্ঘ একবছর ভারতীয় ফুটবল দল আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয় না পাওয়াতে হতাশাও প্রকাশ করলেন। ইষ্টবেঙ্গলের আসিয়ান কাপ জয়ী দলের অধিনায়ক ও প্রাক্তন ফুটবলার সুলে মুসা ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন,বাংলার ফুটবলকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। নির্দিষ্ট কারুর প্রতি দোষারোপ না করে সকলকে সমান দায়িত্ব পালন করার কথা মন করালেন। ক্লাবগুলোকে দলের প্রয়োজনে ভালোমানের ফুটবলার চয়েস করতে হবে। এই ফুটবলার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনপ্রকার আপসে দলেরই ক্ষতি হবে।ভারতীয় ফুটবলার বা বিদেশি ফুটবলার বাছাই-—কোন ক্ষেত্রেই এবিষয়ে শিথিলতা দেখানো যাবেনা।দলের রেজাল্ট ভালো হলেই দর্শকেরা মাঠে আসবে, নচেৎ দর্শকেরা মাঠমুখো হবেনা। আইএসএলে বিশ্বকাপ ফুটবলারদের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে অকপটে মুসা বলেন, ফুটবল ১১জনের খেলা। একজন বিশেষ কেউ সবটা কখনও করতে পারেনা। বিদেশি ফুটবলারদের সাথে ভালোমানের ভারতীয় ফুটবলারদের উঠে আসতে হবে। কিন্তু খারাপ শুনতে হলেও বলতে হচ্ছে,ভারতীয় ফুটবলারদের মান অনেক পড়ে গেছে। তাই,একবছর ভারতীয় ফুটবল দল আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেনি। এভাবে চললে ভবিষ্যতে আরও খারাপ ফল হব। ভারতীয় ফুটবলের মান বাড়াতে হলে প্রথমেই বাংলার ফুটবলের মান বাড়াতে হবে।
বাংলা ছাড়া পাঞ্জাব, গোয়া, কেরলের মত ফুটবল ঐতিহ্যের রাজযেগুলোকে উন্নত হতে হবে। এক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলো তাদের দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেনা। ফুটবলারদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।ফুটবল ও অফিসের কাজের চিন্তা একসাথে চলতে পারেনা। ফুটবলার হয়ে কেবল ফুটবলের চিন্তা করতে হবে।শরীরের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। প্র্যাকটিসের পরে যথেষ্ট শরীরের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। এই যত্নের অভাবে বাংলার ফুটবলারদের যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনই বাংলার ফুটবলের মান স্বাভাবিকভাবেই নেমেছে। বাংলার বড় ক্লাবগুলোকে তাদের জুনিয়র দল সম্পর্কে আরও সিরিয়াস মনোভাব নিতে হবে। রেসিডেন্সিয়াল এ্যকাডেমি গড়ে তুলতে হবে। জুনিয়র খেলোয়াড়রা প্র্যাকটিস সেরে বাড়ির পথে দৌঁড়চ্ছে। এমন করলে তাদের শরীরের যত্ন তো হবেনা।প্র্যাকটিস শেষে ভালো ফুড চাই। ট্রেনিংয়ের জন্য অর্থাৎ প্র্যাকটিসে যথেষ্ট সরঞ্জাম থাকতে হবে। চোট আঘাতের সাথে তাড়াতাড়ি সুস্হ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে ট্রেনিং সেশন থেকে বিশ্রাম ও পরিমাণমত ফুডের সামঞ্জস্য হওয়া চাই। ক্লাবকে ফুটবলারদের গতিপ্রকৃতির উপর নজর বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা প্রতিদিনকার রুটিন। এত দেখভালের জন্য ভালো ইনভেস্টমেন্ট চাই। ভালো স্পনসর ছাড়া ক্লাবগুলো এবিষয়ে কিছুই করতে পারবেনা। ক্লাবকে তাই আর্থিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে।দেশে কটা আর্থিকভাবে শক্তিশালী ক্লাব আছে?দেশে কটা ভালো এ্যকাডেমি আছে? বাংলাতেই বা কটা ভালোমানের ফুটবল এ্যকাডেমি আছে?ফলে বাংলার ফুটবল ক্রমশঃ পিছিয়েছে।
বাংলার ফুটবলের উন্নতিতে ফুটবল নিয়ামক সংস্হার ভূমিকা প্রসঙ্গে সুলে মুসা বললেন, “বাংলার ফুটবল এখনও দেশের সেরা লিগ।এই লিগের প্রতিটি খেলা ভালো মাঠে করতে হবে। ছেলেদের বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। লিগকে দীর্ঘমেয়াদী করা চাই।ছোট ক্লাবগুলো কিভাবে আর্থিক সহায়তা পাবে,তা নিয়ামক সংস্হাকে ভাবতে হবে। ফুটবলারদের স্বার্থে ক্লাবগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে। এরপর, প্রথমে গ্রাসরুট লেভেলের উন্নতি করতে হবে।এখানে বয়সভিত্তিক লিগ হয়। নার্সারি থেকে বয়সের কারচুপি রুখে দিতে হবে। এই কাজে সততা না থাকলে কিচ্ছু লাভ হবেনা। এই নার্সারি লিগ থেকেই ট্যালেন্ট বেছে নিতে হবে। বিভিন্ন এজগ্রুপের স্কোয়াড বানাতে হবে। মানে বয়সভিত্তিক গ্রুপ এ,বি,সি,ডি ইত্যাদি। এই গ্রুপগুলোকে প্রাক্তন ফুটবলাদের হাতে তুলে দিতে হবে। প্রাক্তন ফুটবলারাদের একটা আইডিয়া আছে,অভিজ্ঞতা আছে।তারাও নিজেদের যোগ্যতা প্রমান দিয়ে বড় হয়েছে। ফুটবলের উন্নতিতে এদের কাজে লাগাতে হবে।
প্রাক্তন ফুটবলারদের কোচিং লাইসেন্স প্রসঙ্গে সুলে মুসা সহজভাবেই বললেন, ”প্রাক্তন ফুটবলারদের কোচিং লাইসেন্স করে নেওয়াটা সিরিয়াসভাবে নিতে হবে। লাইসেন্সটা হচ্ছে নিজের কোচিং স্বীকৃতি।এই স্বীকৃতি নেওয়াতে ইগো দেখালে চলবেনা।এটা কোচিং প্রসেস। এক্ষেত্রে ফুটবল নিয়ামক সংস্হার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। প্রো-লাইসেন্স পেশাদার কোচিংয়ের অঙ্গ বিশেষ। কিন্তু কোচিংয়ে ডি থেকে এ অবধি উঠে আসার ক্ষেত্রেও প্রক্রিয়া সহজ করে দেওয়া প্রয়োজন আছে। প্রাক্তন ফুটবলারদের প্র্যাকটিক্যাল নলেজ তো আছেই, কম্পিউটার ও পেপার ওয়ার্কের বিষয়টা করিয়ে নিলে তাদের নানা প্রোগ্রামে নিয়ায়ক সংস্হা কাজে লাগাতে পারে।”
কলকাতা ফুটবলের দর্শকদের প্রসঙ্গে আসিয়ান কাপ জয়ী ঘানাইয়ান ফুটবলার সুলে মুসা বললেন, “দর্শকেরা ভালো ফুটবল দেখতে চায়। আইএসএল ফুটবলের নামী ব্যান্ড হিসেবে কাজ করে। সেখানে দেশের ভালো ভালো মানের ফুটবলাররা খেলে থাকে। স্বাভাবিকভাবে সবাই আইএসএলের খেলা বেশি দেখে। কলকাতা ফুটবলে ভালো মানের ফুটবলাররা খেললেই দর্শকেরা মাঠে আসবে। বাংলাকে তাই গ্রাসরুট থেকে ভালোমানের ফুটবলার তুলে আনতে হবে। কথাতেই আছে ইয়ং জেনারেশনকে তুলে আনো। স্কুল ও ইউনিভার্সিটি লেভেলে অনেক খেলা চালু করতে হবে। বড় তিনটে ক্লাব বাংলায় আছে। এরা এক একটা মডেল হয়ে উঠতে পারে। বাংলার ফুটবল কালচারকে ব্যবহার করেই এগোতে হবে। বাংলার ফুটবলকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবেনা। বাংলা ফুটবলে পিছিয়ে পড়লে ভারতীয় ফুটবলের কখনও উন্নতি হবেনা। ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির জন্য বাংলার ফুটবলকে স্বমহিমায় ফিরতে হবে। ক্লাবগুলো ও তাদের অর্গানাইজেশনকে একসাথে কাজে মন দিতে হবে।”