• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

‘বদলাও বিহার ন্যায়যাত্রা’র মাধ্যমে লিবারেশন আলোড়ন ফেলেছে

কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে নীতিশ কুমারের সরকার ভূমিহীন দরিদ্রদের উপর আরও দুই আঘাত হেনেছে। প্রথমটি হল— দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের মাধ্যমে দরিদ্ররা যে জমিদারতন্ত্রের অবলুপ্তি ঘটিয়েছিলেন, সেখানে ‘জমি জরিপ’ করে যে ল্যান্ড ব্যাঙ্ক সরকার করতে চলেছে, তাতে তাঁদের উৎখাতের আশঙ্কা থাকছে। এবং মনে করা হচ্ছে গরিব-ভূমিহীনরা দশকের পর দশক জুড়ে যে সংগ্রামের মাধ্যমে জমির অধিকার পেয়েছিলেন নীতিশকুমারেরা কর্পোরেট স্বার্থে সেই অধিকার কেড়ে নিতে চান। দ্বিতীয়ত, বিহারে বিদ্যুতের গ্রাহকদের জন্য প্রি-পেইড মিটার বসিয়ে কম-আয়ের গৃহবাসীদের বিদ্যুৎ পাওয়ার অধিকারও কেড়ে নিতে চাইছেন। ‘বদলাও বিহার ন্যায় যাত্রা’র মাধ্যমে লিবারেশন জমি জরিপ বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে, যতদিন না সরকারের প্রতিশ্রুতি মতো প্রতিটি ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারকে পাঁচ ডেসিমেল করে জমি দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, প্রি-পেইড মিটার বসানো বন্ধ করে গরিব ও কৃষকদের জন্য ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিনা পয়সায় (ফ্রি) দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে।

ফাইল চিত্র

নিত্যানন্দ ঘোষ 

বিহারে চলতে থাকা জমানা বদলানোর লড়াইকে শক্তিশালী করতে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন সমগ্র বিহারজুড়ে যে ‘বদলাও বিহার ন্যায় যাত্রা’ করে তা ওই রাজ্যে আলোড়ন ফেলেছে। ঠিক এক মাস আগে লিবারেশন দশদিন (১৬-২৬ অক্টোবর, ২০২৪) ধরে ওই রাজ্যের ৩৮ জেলার ৩০টি’তে প্রায় দু’ডজন যাত্রা সংঘটিত করে। দশদিন ধরে চলতে থাকা এই যাত্রায় প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করে। যাতে সামিল হন প্রায় পাঁচ হাজার সক্রিয় কর্মী, সমর্থক ও পার্টির বিভিন্ন স্তরের (কেন্দ্রীয়, রাজ্য, জেলা) নেতা-নেত্রীবর্গ ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। ‘বিহার বদলাও ন্যায় যাত্রা’ উল্লেখ করা এই জন্য যে সাম্প্রতিক অতীতে ওই রাজ্যে এত বৃহৎ এক কর্মসূচি যা অন্যত্র চর্চা না হলেও বিহার রাজ্যজুড়ে এই যাত্রার ব্যাপক চর্চা হয়েছে, যা ওই রাজ্যের রাজনীতিতে ভাল মাত্রায় আলোড়ন ফেলেছে। এটি উল্লেখ এ কারণেও যে সাম্প্রতিক অতীতে তো বটেই এমন কী অতীতেও প্রতিষ্ঠিত বা অ-প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক দশদিন ধরে জনগণের দাবি পূরণে যাত্রায় নেতৃত্ব দিয়ে পথ পরিক্রমা করছেন এ নজির নেই। জাতী? কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী দু’দফায় (২০২৩ ও ২০২৩-২৪-এ) কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর ও পশ্চিম থেকে পূর্ব ভারত পরিক্রমা করেছেন কংগ্রেস সভাপতি পদ পদত্যাগের পর। সিপিআই(এম) দলের কৃষক নেতা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহারাষ্ট্রে কৃষকদের দাবি পূরণে যাত্রা সংগঠিত করেছেন প্রাক্ করোনা পর্বে। সেই নেতা অশোক ধাওয়ালে ও দলের সাধারণ সম্পাদক নন। ওই দলেরই যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি ও পাহাড় থেকে সমতলে (দার্জিলিং থেকে কলকাতা) ২০০২৪-এর প্রথমে পদযাত্রা করেছেন পশ্চিমবঙ্গে। লিবরেশন প্রাক্তন প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক বিনোদ মিশ্র গত শতাব্দীর আটের দশকের শুরুতে ইন্ডিয়ান পিপলস্ ফ্রন্ট গড়ার পর্বে একটি ডাক (কল) দিয়েছিলেন— ‘নো ইওর পিউপল নো ইওর কান্ট্রি’ (দেশকে জানুন, দেশবাসীকে জানুন) তা থেকে তারা আাজও সরেনি।

ভারতবর্ষে পদযাত্রা সংঘটিত করে জনতার দাবি পূরণে সরকারকে বাধ্য করা বা ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা এবং তাদের এই দেশ ছাড়তে বাধ্য করার কৌশল গান্ধীজি শিখিয়েছেন। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর ‘ডান্ডি আভিযান’ বা যুক্তবাংলায় নোয়াখালিতে দাঙ্গা থামাতে পদযাত্রা সংগঠিত করা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। অতীতে জয়প্রকাশ নারায়ণ, সমাজতন্ত্রী, সর্বাত্মক বিপ্লবের ডাক দিয়ে পদযাত্রা করেছেন। ওই সমস্ত পদযাত্রা নিশ্চিতভাবে বিহারের জনগণের নিজ নিজ অধিকার ও মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত ছিল। পঞ্চাশ-ষাট বছর আগেকার বিহার এবং বর্তমান সময়ের বিহারের মধ্যে পার্থক্য অনেক। জমিদার-সামন্ত প্রভুদের অস্তিত্বের সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে বিভাজনের রাজনীতি ও কর্পোরেট লুণ্ঠন। ডিজিটাল যুগে সামন্ত শোষণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কর্পোরেট ফ্যাসিবাদী শক্তির শোষণ ও লুণ্ঠন, সাধারণ নাগরিক, আমজনতা, শ্রমিক, কৃষক মেহনতি কেউই আজ নিরাপদ নয়। জল-জমি-জঙ্গল থেকে দলিত, নিম্নবর্গের, পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকে উৎখাদের জন্য তথাকথিত ডবল-ইঞ্জিন সরকার কর্পোরেটের হাতে দেশের, রাজ্যের সম্পদ বিকিয়ে দিচ্ছে। চিরাচরিত বা অচিরাচরিত প্রথার শক্তি প্রকল্প চালু করার জন্য ঘুষের বিনিময়ে জনতার বর্ধিত মূল্যে শক্তি কনতে বরাত পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ একজন শিল্পপতিকে (এক্ষেত্রে গৌতম আদানি— কেননা তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী মোদীজির বন্ধু)। এভাবেই জনতার পকেট কেটে আদানি সাম্রাজ্যকে বৃদ্ধি করতে মোদীজিরা উঠেপড়ে লেগেছেন। সাধারণ লোকসভা নির্বাচনে মোদীজির দল ভারতীয় জনতা পার্টিকে জেতাতে বা রাজ্যে রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিরোধী দলকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাঁর দলকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে টাকা সরবরাহকারী যে আদানি! এ অভিযোগ বিরোধীদের।

সিপিআই(এমএল) লিবারেশন সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে তাঁর দলের ‘বদলাও বিহার ন্যায় যাত্রা’ বিহারের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁক নিতে চলেছে। ‘হক দো ওয়াদা নিভাও’ (আমাদের প্রাপ্য দাও, তোমার কথা/প্রতিশ্রুতি রাখ) এই প্রচারাভিযানে লিবারেশন তিনটি মূল দাবিতে তাদের ‘বদলাও বিহার ন্যায়যাত্রা’ সংগঠিত করে। প্রথম দাবিটি ছিল— পঁচানব্বই লক্ষ গৃহবাসী যাঁদের মাসিক আয় ছয় হাজার টাকা বা তারও কম, সেই সমস্ত দরিদ্রতমদের দু’লক্ষ করে টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান; দুই, ভূমিহীন দরিদ্রদের পাঁচ ডেসিমেল করে জমি প্রদান ও তিন, তাদের সকলের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া। এই সমস্ত প্রতিশ্রুতি ডবল ইঞ্জিন সরকারের দিল্লির (এক্ষেত্রে কেন্দ্রের) নরেন্দ্র মোদীজি এবং বিহারের নীতিশ কুমার দিয়েছিলেন। কিন্তু বিহারের লক্ষ লক্ষ বঞ্চিত ও নিপীড়িত দরিদ্রদের ক্ষেত্রে তাঁদের (মোদীজি ও নীতিশকুমার) প্রতিশ্রুতি ও নিষ্ঠুর বিশ্বাসঘাতকতার জট পাকানো কাহিনিতে পর্যবসিত। বিহারের মেহনতি মানুষের এই সমস্ত মৌলিক দাবিগুলির প্রতি তাঁদের ক্রমান্বয়ে বিশ্বাসঘাতকতা ও অবহেলার বিরুদ্ধে গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাস ধরে লিবারেশনের ডাকে ব্লকে ব্লকে লাখে লাখে প্রতিবাদী জনতা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সেই আবহেই লিবারেশন ‘বদলাও বিহার ন্যায়যাত্রা’ দশদিন ধরে পরিক্রমা করে তিন হাজার কিলোমিটার উপরিউক্ত দাবিদাওয়ার ভিত্তিতে।

কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে নীতিশ কুমারের সরকার ভূমিহীন দরিদ্রদের উপর আরও দুই আঘাত হেনেছে। প্রথমটি হল— দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের মাধ্যমে দরিদ্ররা যে জমিদারতন্ত্রের অবলুপ্তি ঘটিয়েছিলেন, সেখানে ‘জমি জরিপ’ করে যে ল্যান্ড ব্যাঙ্ক সরকার করতে চলেছে, তাতে তাঁদের উৎখাতের আশঙ্কা থাকছে। এবং মনে করা হচ্ছে গরিব-ভূমিহীনরা দশকের পর দশক জুড়ে যে সংগ্রামের মাধ্যমে জমির অধিকার পেয়েছিলেন নীতিশকুমারেরা কর্পোরেট স্বার্থে সেই অধিকার কেড়ে নিতে চান। দ্বিতীয়ত, বিহারে বিদ্যুতের গ্রাহকদের জন্য প্রি-পেইড মিটার বসিয়ে কম-আয়ের গৃহবাসীদের বিদ্যুৎ পাওয়ার অধিকারও কেড়ে নিতে চাইছেন। ‘বদলাও বিহার ন্যায় যাত্রা’র মাধ্যমে লিবারেশন জমি জরিপ বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে, যতদিন না সরকারের প্রতিশ্রুতি মতো প্রতিটি ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারকে পাঁচ ডেসিমেল করে জমি দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, প্রি-পেইড মিটার বসানো বন্ধ করে গরিব ও কৃষকদের জন্য ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিনা পয়সায় (ফ্রি) দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে।

রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বিচার করলে নীতিশকুমার, লালুপ্রসাদ যাদব, রামবিলাস পাসোয়ান ও সুশীল মোদীদের যুগাবসানে নতুন এক প্রজন্মের উত্থান সামনে এসে গিয়েছে। প্রজন্মের স্থানান্তরে বিহার এবং সামগ্রিকভাবে বিহারের রাজনীতি এক উত্তরণের পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেই উত্তরণে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে তাদের নওজোয়ান সাথীরা বিহারের বুকে যে রাজনৈতিক কলধ্বনি সৃষ্টি করেছে, তা সামগ্র বিহারেই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। অচিরেই সেই ধ্বনি হয়তো ঝাড়খণ্ডেও অনুরণন তুলবে।
স্বাভাবিকভাবেই বিভাজনের রাজনতির কারবারিরা বিহারে যারা দুই দশক ধরে পেছন থেকে শাসন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে আগামী ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে, তারা চাইবে বা বলা ভালো মরিয়া প্রচেষ্টা চালাবে এককভাবে ক্ষমতায় পৌঁছে প্রতিবেশী রাজ্য যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশের মতো ‘বুলডোজার রাজ’ (সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে বুলডোজার রাজ চালানো যাবে না বলে) বিহারবাসীর উপর চাপিয়ে দেবে। ‘বদলাও বিহার ন্যায় যাত্রা’ এবং একই সঙ্গে সংঘটিত গিরিরাজ সিং-এর ‘হিন্দু স্বাভিমান যাত্রা’, যা ভারতীয় সংবিধানকে বিদ্রূপ করে পূর্ব বিহারের জেলাগুলিতে মুসলিম বিরোধী হিংসা ছড়িয়েছে এরা লিবারেসনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যেন অবতীর্ণ! উল্টোদিক থেকে যুব বিহারে দাবি, বিহারে আরও ভাল বিদ্যালয়ের যেখানে গিরিরাজ বিহারবাসীকে কেবল ত্রিশূল উপহার দিতে পারেন। নিশ্চিতভাবেই দুই যাত্রা ভবিষ্যৎ বিহারের জন্য দুই দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিচালিত। সুতরাং দুই যাত্রার ভিশনও ভিন্ন।

‘বদলাও বিহার ন্যায় যাত্রা’ নিশ্চিতভাবেই ক্ষমতাসীন শাসকের পরিবর্তন ঘটিয়ে অন্য দল বা গোষ্ঠীকে আনার লক্ষ্যে পরিচালিত রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং বিহারের গরিব-গুর্বো, মেহনতি, শ্রমিক-কৃষকদের অধিকার অর্জন বা সর্বোপরি সামগ্রিক বিহারের আমূল পরিবর্তনের/রূপান্তরের রাজনৈতিক কর্মসূচি বলে লিবরেশনের সর্বোচ্চ নেতা জানিয়েছেন। লিবারেশন সাধারণ সম্পাদক জানাচ্ছেন, তাঁদের এই ‘বদলাও বিহার ন্যায় যাত্রা’ প্রশান্ত কিশোর বা বিজেপির মতো ছদ্ম-আধুনিক মোড়কে পুরনো সামন্ততন্ত্রকে বহাল রাখার কর্মসূচি নয়, বরং বিহার দাবি করে বিহারবাসীর দীর্ঘদিনের অবহেলিত মৌলিক দাবিগুলি পূরণের যা একের পর এক ক্ষমতাসীন সরকার পূরণ না করে মুখনিঃসৃত বাণী হিসাবেই জনতাকে উপহার দিয়েছে। দীপঙ্কর ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, তাঁদের এই ‘বদলাও বিহার ন্যায় যাত্রা’তে বিহারবাসীর মৌলিক অধিকার রোটি-কাপড়া-মকান (খাদ্য, বস্ত্র বাসস্থান)-এর সঙ্গে বিজলি-পানি, সড়ক (বিদ্যুৎ-জল-রাস্তা)-এর পরিকাঠামো তৈরি করে সমাজের সবচেয়ে অবহেলিতদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের অধিকার নিশ্চিত করে পিছিয়ে পড়া এই রাজ্য থেকে সস্তায় শ্রম চালানের অঞ্চল গড়ে তোলার প্রয়াসকে ব্যর্থ করে বিহারবাসীকে দরিদ্র, অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা এবং সামাজিক নিপীড়নের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যেও তাঁদের এই ‘বদলাও বিহার ন্যায় যাত্রা’।

এটি ঘটনা যে ‘হক দো ওয়াদা নিভাও’ প্রচারাভিযান এবং ‘বদলাও বিহার ন্যায় যাত্রা’র মাধ্যমে লিবারেশন বিহারের সামাজিক রূপান্তর এবং সামগ্রিক ন্যায় বিচারের কর্মসূচি সামনে এনেছে। দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে তাঁদের বিহার বদলানোর লাগাতর রাজনৈতিক কর্মসূচি বিহারের রাজনীতিতেই শুধু নয়, সামগ্রিকভাবে ভারতবর্ষের রাজনীতিতে দলকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছে। জহর দত্ত, বিনোদ মিশ্র ও রঘু—স্বদেশ ভট্টাচার্য (জহর-বিনোদ-রঘু) মিলে বিহারের ভোজনুর থেকে গত শতাব্দীর মধ্য সত্তরে যে সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন তা আজ ভারতবর্ষ জুড়েই ডালপালা মেলেছে। বর্তমানে দলের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ভারতবর্ষজুড়ে দল ফ্যাসিবাদ-বিরোধী যে লড়াই-এর অঙ্গীকার করে কঠিন সংগ্রামে রত আছে তা তাঁদেরকে রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে বিশেষ জায়গা করে দিয়েছে। সাধারণভাবে বামেরা (সিপিআই-সিপিআই(এম)-সিপিআই(এমলে)-আরএসপি, ফরওয়াড ব্লক) ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে সামনের সারিতে আছে। প্রয়াত সীতারাম ইয়েচুরি-দীপঙ্কর ভট্টাচার্যরা সেই লড়াইয়ে সামনের সরিতে ছিলেন। ইয়েচুরির মৃত্যুর পর সিপিআই(এম) দলের লড়াইয়ে বামেরা ঐক্যবদ্ধ আছেন। অন্যান্য সমস্ত বাম শক্তিকেও এই লড়াইয়ে (ফ্যাসিবাদ বিরোধী) সময়ের দাবিতেই ঐক্যবদ্ধও হতে হবে। যেমন সময়ের দাবিতেই বিহারের গরিব-গুর্বো, মেহনতি, নারী, যুব বাহিনী, নারী বাহিনী দৃঢ়ভাবে নিজেদের জাহির করে ‘বদলাও বিহার ন্যায় যাত্রা’য় সামিল হয়ে বিহার বদলানোর / রপান্তরের জন্য লাগাতার আন্দোলন গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান রেখেছেন।