ইডেনে দিন-রাত টেস্ট ক্রিকেটের দিনক্ষণ যত এগিয়েছে তত গােলাপি উন্মাদনায় ভেসেছে গােটা শহর। শহীদ মিনার থেকে শুরু করে শহরের সবথেকে উঁচু বহুতলেও লেগেছে গােলাপী আবেশ। মিষ্টি থেকে পােশাক কেনাকাটাতেও হিড়িক ছিল চোখে পড়ার মতাে। ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে চায় প্রায় সবাই। আর এর মধ্যেই মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে পকেট গরম করতে উদ্যোগী হয়ে পড়ে কিছু অসাধু কারবারী।
গােলাপী উচ্ছ্বাসে হাত সেঁকে নিতে টিকিট ব্ল্যাকিং থেকে বেটিং চক্র প্রথম থেকেই ছিল সক্রিয়। বেআইনি কারবারীরা যে এই সুযােগকে কাজে লাগানাের চেষ্টায় থাকবে তা জানতেন গােয়েন্দারাও। আর তাই ইডেন সংলগ্ন এলাকায় সাদা পােশাকে হাজির ছিলেন কলকাতা পুলিশের গুণ্ডাদমন শাখার আধিকারিকরা।
কলকাতা পুলিশের গােয়েন্দা বিভাগ সূত্রের খবর, ২২ নভেম্বর থেকে খেলা শুরু হওয়ার কথা। এদিকে ইডেন সন্নিহিত এলাকায় অসাধু চক্রকে ঘােরাফেরা করতে দেখা যায় প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই। ২০ নভেম্বর ইডেন সংলগ্ন এলাকা থেকে টিকিট ব্ল্যাকিংয়ের চেষ্টায় ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তল্লাসি চালিয়ে তাদের কাছ থেকে ৩৮টি টিকিট বাজেয়াপ্ত করা হয়। একইভাবে ২১, ২৩ ও ২৪ নভেম্বর গােয়েন্দা অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় যথাক্রমে ৬, ৯ এবং ১০ জনকে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে যথাক্রমে ৪০, ৩৪ এবং ১০৪টি টিকিট। ধৃত ২১৬ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ধারায় ময়দান থানায় অভিযােগ দায়ের করা হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচে সক্রিয় হয় বেটিং চক্রও। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় জোড়াবাগান এলাকার বৃন্দাবন বসাক স্ট্রিটের একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় ৩ জনকে। সেখানে বসে চলছিল ক্রিকেট বেটিং। নিজেদের মােবাইল ফোনে বেটিং অ্যাপ্স ব্যবহার করে চলছিল এই বেআইনি কারবার।
ধৃতরা স্থানীয় জোড়াবাগান ও বড়তলা থানা এলাকার বাসিন্দা কুন্দন সিং (২২), মুকেশ মালি (৩২), সঞ্জয় সিং (৪২)। অভিযুক্তদের জেরা করে এই চক্রের চতুর্থ পাণ্ড মহম্মদ সার্জিল হােসেনকে নিউ মার্কেট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এই অভিযানে ৪টি মােবাইল ফোন এবং ২ লাখ ৫ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ।
এছাড়া একেবারে ইডেন গার্ডেন গ্রাউন্ডের এফ ১ এবং জি ১ ব্লক থেকে খেলা চলাকালীন বেটিং চালানাের চেষ্টায় গ্রেফতার করা হয় ৫ জনকে। টেলিকাস্ট ল্যাগ ব্যবহার করে এই কারবার চালানাে হচ্ছিল বলে জানা গিয়েছে। কলকাতা পুলিশের গােয়েন্দা বিভাগের অভিযান চালিয়ে খেলা চলাকালীনই তাদের গ্রেফতার করে।
ধৃতরা সব ভিন রাজ্যের বাসিন্দা। ল্যাপটপ ও মােবাইল ফোনে বেটিং অ্যাপ্স ব্যবহার করে বেটিং করছিল বলে জানা গিয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে তল্লাসি চালিয়ে উদ্ধার হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ধৃতদের বিরুদ্ধে ওয়েস্ট বেঙ্গল গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ (বি) এব ৪২০ ধরায় অভিযােগ দায়ের করা হয়েছে ময়দান থানায়।