ভোট শেষ। বুথফেরত সমীক্ষাও শেষ। মহারাষ্ট্রে শনিবার সকাল থেকে ফলপ্রকাশের পালা। তাল ঠুকছে দু’পক্ষই। বিনা যুদ্ধে কেউই এক ইঞ্চি জমি ছেড়ে দিতে রাজি নয়, তাই ফলপ্রকাশের আগে দড়ি টানাটানি মহা বিকাশ আঘাড়ি এবং মহাজুটি দুই শিবিরেই। ফলে সরকার গঠনের ইঁদুর দৌড়ে শেষ হাসিটা কে হাসবে, সেই জল্পনা এখন তুঙ্গে। এক্সিট পোল বলছে, খানিক এগিয়ে বিজেপি জোট। কিন্তু ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। প্রকাশ্যে দুই শিবিরই অবশ্য সরকার গড়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস দেখানোর চেষ্টা করছে
মহারাষ্ট্রের বিজেপি সভাপতি চন্দ্রশেখর বাওয়ানকুলে বলেছেন , ‘আমরা ম্যাজিক ফিগারের থেকেও অনেক বেশি আসনে জিতব। আমাদের বর্তমানে একশ পাঁচ জন বিধায়ক আছেন। এবার আরও বেশি আসনে জিতব। একনাথ শিন্ডে ও অজিত পাওয়ার গোষ্ঠীও ভালো ফল করবে বলে তাঁর দাবি। সরকার গড়তে কোনও নির্দলের সমর্থন আমাদের প্রয়োজন হবে না। তা সত্ত্বেও কেউ সমর্থন দিতে চাইলে আমরা তা নেব। কারণ নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নের জন্য নির্দল বিধায়করা সরকারের দিকেই ঝুঁকে থাকতে পছন্দ করেন’।
বিজেপি যতই আত্মবিশ্বাস দেখাক না কেন, মহা বিকাশ আঘাড়ি মনে করছে, হরিয়ানার মত এক্সিট পোলের ফল উল্টে দিয়ে জয় তাদেরই হবে কিন্তু তাদের আশঙ্কা অন্য জায়গায়। তাদের ভয় হল, ত্রিশঙ্কু ফল হলে বিজেপি এবারেও ‘অপারেশন কমল’ ছকে নামবে। তাই একটিও বিধায়ক যাতে টাকার টোপে হাতছাড়া না হয়, তার জন্য গোপনে কৌশল করছে তারা। বৃহস্পতিবার রাতে মুম্বইয়ের একটি হোটেলে প্রায় দু -ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এই কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন কংগ্রেসের বালাসাহেব ঠোরাট, শারদ পাওয়ারের বিশ্বস্ত অনুচর জয়ন্ত পাটিল এবং উদ্ধব ঠাকরের ছায়াসঙ্গী সঞ্জয় রাউত। পরে তাঁরা উদ্ধব ঠাকরে এবং শারদ পাওয়ারের সঙ্গে আলাদাভাবে দেখা করেন।
তবে অশান্তি যে একেবারেই নেই তা বলা যাবে না, কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি নানা পাটোলে বলে দিয়েছেন, মহারাষ্ট্রে সরকার হবে আঘাড়ির। আর তাতে নেতৃত্ব দেবে কংগ্রেস। তাঁর ইঙ্গিত স্পষ্ট, কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীই শপথ নেবেন পঁচিশে নভেম্বর। শুনে বেজায় খাপ্পা উদ্ধব ঠাকরের ছায়াসঙ্গী ও সাংসদ সঞ্জয় রাউত। তিনি বলছেন,’মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, সেটা ঠিক করা হবে জোটসঙ্গীদের বৈঠকে। পাটোলে সাহেবকে যদি কংগ্রেস হাই কম্যান্ড মুখ্যমন্ত্রী করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে, তাহলে মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধীদের সেটা প্রকাশ্যে ঘোষণা করা উচিত।’ দুই শরিকের মধ্যে বিবাদে অবশ্য খানিক চুপ শরদ শিবির। তারা অপেক্ষা করছেন ফলপ্রকাশের।
অন্যদিকে সমস্যা বাড়ছে বই কমছে না শাসক শিবিরেও। একনাথ শিণ্ডের শিবসেনার নেতা সঞ্জয় শীর্ষত বলছেন, ‘মহাজুটি শিণ্ডের নেতৃত্বেই নির্বাচনে গিয়েছিল। তাই কুরসির অধিকার তাঁরই।’ শুনে বিজেপি নেতা প্রবীণ ডারেকরের বক্তব্য, “বিজেপিই মহাজুটির বড় শরিক তাই মুখ্যমন্ত্রী হওয়া উচিত ফড়ণবিসের।” তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য এনসিপির অজিত শিবিরের। অজিত শিবিরের নেতা অমল মিতকারী বলছেন, “ফ ‘ফলাফল যা-ই হোক কিংমেকার হবেন অজিত পওয়ার।’ অর্থাৎ ফলপ্রকাশের পর ‘কিংমেকার’ হতে অজিত যে শিবির বদলাতে পিছপা হবেন না, এটা পরিষ্কার।
মারাঠাভূমিতে যে ভাবে নারদ নারদ চলছে, তাতে একটা কথা বলাই যায় ভোটের ফল যে দিকেই যাক না কেন, আগামী দিনে ভোটের ফলাফল কোন দিকে গড়ায়, সেই দিকেই তাকিয়ে সকলে।