ক্রমশই অসহনীয় হয়ে উঠছে দিল্লির দূষণ পরিস্থিতি। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে দিল্লির বায়ুদূষণ প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করল আন্তর্জাতিক মহল। রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সম্মেলনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এল দিল্লির বর্তমান পরিস্থিতি। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার সকালে দিল্লি ও সংলগ্ন নয়ডা, গাজিয়াবাদ এবং গুরুগ্রামে দূষণ ৫০০ সূচক ছুঁয়েছে। দিল্লি সরকার এই পরিস্থিতিকে ‘স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ বলে ঘোষণা করেছে। সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কাছে দূষণ রোধ করতে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। দূষণের কারণে সুপ্রিম কোর্ট সোমবারই আপ সরকারকে প্রবল ভর্ৎসনা করে। তার জেরে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতিশী কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেন। তাঁর কথায়, ‘কেন্দ্র এখন কী করছে ? প্রধানমন্ত্রী চুপ কেন ? দিল্লি, পঞ্জাবের মানুষকে নিয়ে তাঁর কোনও চিন্তা নেই ? এই দূষণ রোধ করতে প্রধানমন্ত্রী এখনও পর্যন্ত একটাও বৈঠক ডেকেছেন ? জরুরি পদক্ষেপ করেছেন?’ অতিশীর অভিযোগ, বায়ুদূষণ রুখতে কেন্দ্র গত কয়েক বছরে কোনও পদক্ষেপ করেনি।
দিল্লির দূষণ ঠেকাতে কেন্দ্রের কাছে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের অনুমতি চেয়েছে আপ সরকার। মঙ্গলবার দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই কেন্দ্রীয় সরকারকে লেখা এক চিঠিতে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপের দাবি জানান। মন্ত্রী বলেন, ‘এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় কৃত্রিম বৃষ্টি। ‘স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ সৃষ্টি হয়েছে।’
এদিকে দিল্লির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। তাঁর প্রশ্ন, ‘এর পরেও কি দিল্লির রাজধানী থাকা উচিত ?’ শশী থারুর লেখেন, ‘সারা বিশ্বের মধ্যে এই মুহূর্তে দিল্লি সবচেয়ে দূষিত শহর। দ্বিতীয় দূষিত শহর ঢাকার থেকেও খারাপ অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছে দিল্লি।’ কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে তিনি লেখেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই দুঃস্বপ্নের মধ্যে থেকেও সরকারের কোনও মাথাব্যথা নেই। আশ্চর্যের বিষয় হল, এই নিয়ে আজ পর্যন্ত সরকারের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কাছে বসবাসের অযোগ্য হয়ে ওঠে দিল্লি। শ্বাসকষ্ট, ও একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় দূষণের কারণে। বছরের বাকি সময়েও এর প্রভাব থেকে যায়। এরপরও কি এই শহরের দেশের রাজধানী থাকা উচিত ?’
এদিকে, প্রচণ্ড কুয়াশার জেরে দুর্ঘটনার বলি হয়েছেন দুই জন বাইক আরোহী। একটি দুর্ঘটনা ঘটে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বুলন্দশহরে এবং অন্যটি বদাউনে। বিভিন্ন পথ দুর্ঘটনায় মঙ্গলবার সকালের দিকে বেশ কিছু গাড়ির আরোহীরা জখম হন। আগ্রা-লখনউ এক্সপ্রেসওয়েতে ঘন কুয়াশার কারণে একের পর এক গাড়িতে ধাক্কা লাগলে বেশ কয়েকজন আহত হন। দুর্ঘটনার সময় রাস্তায় প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছিল না বলে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান। মঙ্গলবার সকাল থেকেই দৃশ্যমানতা অনেকটাই কমে যায়।