• facebook
  • twitter
Sunday, 17 November, 2024

অগ্নিগর্ভ মণিপুর, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হামলার চেষ্টা

জিরিবাম জেলায় ছ’জনের অপহরণ এবং খুনের পর থেকে নতুন করে অশান্তি ছড়িয়েছে মণিপুরে। বিচার চেয়ে পথে নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ।

জিরিবাম জেলায় ছ’জনের অপহরণ এবং খুনের পর থেকে নতুন করে অশান্তি ছড়িয়েছে মণিপুরে। বিচার চেয়ে পথে নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে শনিবার বিকেলেই রাজধানী ইম্ফলে কার্ফু জারি করা হয়। ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেওয়া হয় ৭ জেলায়। তারপরেও মণিপুরে অশান্তি থামার লক্ষণ নেই। এবার টার্গেট মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের বাড়ির সামনে শনিবার রাতে পৌঁছে গেল উন্মত্ত জনতা।

মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হামলার চেষ্টা করে উন্মত্ত জনতা। পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে কোনওক্রমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ওই সময় মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে ছিলেন না বলে খবর। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তিনি রাতে আর বাড়িতে ফেরেননি। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেই রয়েছেন তিনি। শনিবার রাতে রাজ্যের দুই মন্ত্রী এবং তিন বিধায়কের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বিক্ষোভকারীদের আর একটি দল মুখ্যমন্ত্রীর মেয়ে-জামাইয়ের বাড়ি আক্রমণ করে। সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় বিক্ষোভকারীরা ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। প্রশাসন সূত্রে খবর, মন্ত্রীদের সপরিবার সার্কিট হাউসে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বিধায়কদেরও সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সাপম রঞ্জন, উপভোক্তা বিষয়কমন্ত্রী এল সুসীন্দ্র সিংহ বিজেপি বিধায়ক তথা মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের জামাতা আরকে ইমো-সহ একাধিক প্রশাসনিক আধিকারিকের বাড়িতে হামলা চালায় উন্মত্ত জনতা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, অবিলম্বে জিরিবাম জেলায় ছ’জনের অপহরণ এবং খুনের অভিযুক্তদের ধরতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সেনাবাহিনী এবং অসম রাইফেলসের জওয়ানদের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।

মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ইম্ফল পশ্চিম ও ইম্ফল পূর্বে কার্ফু জারি করা হয়েছে। এছাড়াও, সাতটি জেলা, ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব, বিষ্ণুপুর, থৌবাল, কাকচিং, কাংপোকপি এবং চুরাচাঁদপুরে দুই দিনের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ রয়েছে। এক সিনিয়র পুলিশ অফিসার বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা বিজেপি বিধায়কের বাড়ি ভাঙচুর করেছে এবং তাঁর সম্পত্তিতে আগুন দিয়েছে।

অন্য একজন আধিকারিক বলেন, বিক্ষোভকারীরা ইম্ফল পশ্চিমের তেরাতে বিজেপি বিধায়ক সাপম কুঞ্জকেসরের বাসভবনেও হামলা চালিয়েছিল। বিধায়কের বাসভবনের বাইরে রাখা একটি গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। এদিকে  ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব এবং বিষ্ণুপুর থেকে মোট ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মণিপুর পুলিশ। একাধিক পিস্তল, কার্তুজ এবং মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, থাংমেইবন্দে জেলার আরেক বিজেপি বিধায়ক জয়কিশান সিংয়ের বাসভবনও ভাঙচুর করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ওয়াংখেই কেন্দ্রের জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) বিধায়ক টি অরুণ এবং লাংথাবল থেকে বিজেপি বিধায়ক করম শ্যামের বাসভবনও ঘেরাও করে। এদিকে, বিষ্ণুপুর জেলার ইরেংবাম ম্যানিং এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর নেই।

শুক্রবার সন্ধ্যায় মণিপুর-অসম সীমানার জিরিবাম জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের জিরিমুখের একটি নদীর কাছে ৬ জনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। মৃতদেহগুলি শুক্রবার রাতে আসামের শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (এসএমসিএইচ) আনা হয় এবং ময়নাতদন্ত করা হয়। গত সোমবার, জিরিবাম জেলায় নিরাপত্তা বাহিনী ও জঙ্গিদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের পর একটি ত্রাণ শিবির থেকে তিন মহিলা ও তিন শিশু নিখোঁজ হয়। মেইতেই সংগঠনের অভিযোগ, জঙ্গিরা তাঁদের অপহরণ করেছে। তাঁদের খোঁজ শুরু করে নিরাপত্তাবাহিনী। শুক্রবার রাতে তিন জনের দেহ উদ্ধার হয়। শনিবার উদ্ধার হয় আরও তিন জনের দেহ। অভিযোগ, অপহৃত ছ’জনের দেহ নদীতে ভেসে এসেছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার কেন্দ্র জিরিবাম সহ মণিপুরের ৬টি থানা এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা) পুনরায় আরোপ করেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক স্পষ্ট জানিয়েছে দিয়েছে, টানা হিংসার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সংঘাত-বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার পরামর্শ দিয়েছেন।