অন্যদিনের থেকে আজকের দিনটা একেবারেই আলাদা কলকাতার বিখ্যাত ‘নিষিদ্ধপল্লী’ সোনাগাছিতে। আজকে সেখানের বাসিন্দাদের ‘রাতের ব্যস্ততা’ থাকবে না বললেই চলে। কারণ সেখানে আজকে উৎসবের আমেজ। বড় করে প্যান্ডেল বেঁধে, সার্বজনীনভাবে হতে চলেছে কার্তিক পুজো। সাধারণত মানুষেরা দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ছট পুজো সহ বিভিন্ন পুজোতে আনন্দ করে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন ‘নিষিদ্ধ পল্লীতে’ কার্তিক পুজো হয় বিশাল ধুমধাম করে। প্রায় প্রতিটি যৌনকর্মীরাই ঘরে কার্তিক পুজো করে থাকেন। যদি পয়সাও না থাকে পকেটে, তাও ধার দেনা করে কার্তিক পুজো করা চাই। এইরকম যৌনকর্মীদের ঘরে ঘরে হওয়া কার্তিক পুজো এবার সার্বজনীন আকারে হতে চলেছে সোনাগাছিতে। এই সার্বজনীন কার্তিক পুজোর উদ্যোক্তা যৌনকর্মীদের সন্তানদের সংগঠন ‘আমরা পদাতিক’। সোনাগাছির ওলিতে গলিতে কান পাতলে যৌনকর্মীদের কার্তিক পুজো সম্বন্ধে যে মনোভাব উঠে আসে তা হল, এখানকার বাসিন্দারা কেউ কেউ কার্তিক ঠাকুরকে সন্তান হিসেবে পেতে চান তাই কার্তিকের পুজো করেন।
আবার কেউ বা কার্তিকের মতো সুঠাম সুদর্শন চেহারাধারী কাউকে চান নিজের স্বামী হিসেবে পেতে। সত্যি কথা বলতে, স্বামী হিসেবে বললে খুব ভুল বলা হবে, কারণ কালের স্রোতে কারোর স্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন এদের অধরাই থেকে যায়। তাই এরা চায় অবিবাহিত সুন্দর কার্তিকের মতো তাঁদেরও কোনও ‘বাবু’ থাকুক। মূলত এই সমস্ত ভাবনা-চিন্তা থেকেই ধুমধাম করে কার্তিক পুজো হয় সোনাগাছিতে। তাই দুর্গাপুজো, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো, ছট পুজোতে সোনাগাছিতে আনন্দ থাক আর নাই থাক, কার্তিক পুজোতে এরা মহা আনন্দে মেতে ওঠেন। এদিন তাঁরা নিজেদের মধ্যে নাচ-গান করে প্রত্যেক দিনের বেঁচে থাকার যন্ত্রণা ভুলে যান। সোনাগাছিতে গিয়ে দেখা গেল বড় করে প্যান্ডেল বেঁধে পূজোর আয়োজন করা হয়েছে। প্রথম বছর হলেও আয়োজনের কোনও কমতি নেই। এই পূজোর উদ্যোক্তারা সকলেই যৌনকর্মীদের সন্তান হলেও, পূজোর কাজে হাত লাগান তাদের মায়েরাও।
দেখতে গেলে যৌনকর্মী এবং তাঁদের সন্তানরা পুরো পুজোর কাজ নিজের হাতেই করছেন। ‘আমরা পদাতিক’-এর সেক্রেটারি শতাব্দি সাহা জানিয়েছেন, “আজ অর্থাৎ শনিবার সোনাগাছির প্রথম সার্বজনীন কার্তিক পুজোর উদ্বোধনের জন্য উপস্থিত থাকবেন মন্ত্রী শশী পাঁজা।” শতাব্দি সাহা আরও জানালেন, ” প্রতি বছর সোনাগাছির বেশিরভাগ ঘরেই কার্তিক পুজো হয়। মেয়েরা ধার দেনা করে হলেও এই পূজা করে। এই দিনটা একেবারেই উৎসবমুখর থাকে আমাদের সোনাগাছিতে। এবার প্রথম আমরা সার্বজনীন আকারে সকলকে নিয়ে কার্তিক পুজো করছি। আমাদের এই পুজোতে বহু সাধারণ মানুষও উপস্থিত হবেন।”
তবে এ কথা বলাই যায়, কোনও সাধারণ দর্শনার্থী উপস্থিত থাকুক আর না থাকুক, ‘নিশী-কথা’ বলে যে সোনাগাছি, সেখানকার বাসিন্দারা একদিনের জন্য হলেও ‘রংচংয়ে আলো’ আর ‘চড়া মেকআপ’ থেকে মুক্তি নিয়ে আনন্দে মাতবেন তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে।