শেক্সপিয়রের কালজয়ী ট্র্যাজেডি রোমিও জুলিয়েট-এর অ্যাডাপ্টেশন এবার হইচই-এ আসছে সিরিজ আকারে। পুরনো গল্পকেই নতুনভাবে বলার দায়িত্ব নিয়েছেন নির্দেশক অর্পণ গড়াই এবং চিত্রনাট্যকার দুর্বার শর্মা। নাটক, রোম্যান্স এবং রোমাঞ্চের মোড়কে তাঁরা একটি ট্র্যাজিক প্রেমের গল্প বলেছেন, যেখানে রানা এবং জাহানারা নামের প্রেমিক যুগল, দুই পরিবারের প্রতিদ্বন্দিতার বলি হয়। তালমার পটভূমিতে, তাদের সাহসী প্রেমের গল্প বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা এবং হৃদয় বিদারক পরিণতির দিকে এগোয়। আর একটি বিশেষ ভূমিকায় রয়েছে তালমার তারকা ফুটবল খেলোয়াড় রানা। না, সবটুকু জানতে হলে সিরিজটি দেখতে হবে। সিরিজ লঞ্চের আগে কথা হচ্ছিল ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’-এর অভিনেতা তথা সৃজনশীল নির্দেশক অনির্বাণ ভট্টাচার্যের সঙ্গে।
ম্যাকবেথ অবলম্বনে ‘মন্দার’, ওথেলো থেকে ‘অথৈ’ এবং এখন রোমিও-জুলিয়েট থেকে ‘তালমার রোমিও-জুলিয়েট’। ট্রেন্ড দেখে মনে হচ্ছে বারবার শেক্সপিয়রের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। এটা ঘটছে কেন?
‘মন্দার’ ছাড়া বাকি দুটোই অর্থাৎ ‘অথৈ’ এবং ‘তালমার রোমিও-জুলিয়েট’ অন্যদের সৃষ্টি এবং ভাবনা। বারবার শেক্সপিয়র এটা মনে হচ্ছে কারণ ৩-৪ বছরের মধ্যে পর পর জিনিসগুলো তৈরি হয়েছে। বিষয়টা একেবারেই কাকতালীয়। আমার নির্দেশনায় শেক্সপিয়ার অবলম্বনে ‘মন্দার’ করার পরই কিন্তু আমি বাদল সরকারের নাটকের একটা অ্যাডাপ্টেশন করেছি। অর্থাৎ আমার এর পরেই আবার শেক্সপিয়র করার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। এই চিত্রনাট্যগুলো একজন অভিনেতা হিসাবে আমার কাছে এসেছে, পরে আমি সৃজনশীল নির্দেশক হিসাবে যুক্ত হয়েছি।
তবে এটা সত্যি, শেক্সপিয়রের নাটকের যে-এভারলাস্টিং কোয়ালিটি, এবং এতে অভিনেতা হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করার যে-সুযোগ থাকে, তা তো সবার লেখায় থাকে না। ফলে বারবার হলেও আমার অভিনেতা হিসাবে শেক্সপিয়রে কোনও আপত্তিই নেই। এমনি এমনি তো শেক্সপিয়র সবচেয়ে বেশি চর্চিত বা অভিনীত নয়। এর কমার্শিয়াল এলিমেন্ট সর্বকালেই প্রসঙ্গিক।
হিন্দি বা বাংলা ছবিতে এর আগে বহুবার আমরা রোমিও-জুলিয়েটের আভাস পেয়েছি। ‘তালমার রোমিও-জুলিয়েট’-এ কী নতুনত্ব যোগ করা হল?
এই অ্যডাপ্টেশনে আমরা রোমিও-জুলিয়েটকে একটা নতুন মিলিউ বা নতুন পৃথিবীর আঙিনায় দেখব। অর্পণ আর দুর্বার এটাকে একটা নতুন ফর্মে ভেবেছে। ফলে পুরনো হয়েও এটা একটা নতুন আঙ্গিকের রোমিও জুলিয়েট।
ভালোবাসার ধরন তো এই সময়ে অনেকটাই বদলে গিয়েছে। যেহেতু নতুন প্রজন্মই ওটিটি বেশি দেখে ,তাদের কি স্পর্শ করবে এই পিরিয়ড পিস?
আমার মনে হয় যে, যারা এই গল্পটাকে লিখেছে, তারা তাদের প্রেমের বিশ্বাস থেকে গল্পটা ভেবেছে। তারা এই জেনারেশন কী প্রেমে বিশ্বাস করে সেটার উপরে ভিত্তি করে লেখেনি। অর্পণ- দুর্বার যেভাবে রোমিও জুলিয়েটের প্রেম দেখাতে চেয়েছে, সেটার সঙ্গে আজকের দিনের প্রমিক-প্রেমিকারা কতটা একাত্ম বোধ করে, সেটাই এখন দেখার।
একজন ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে ঠিক কী কী দায়িত্ব আপনাকে পালন করতে হয়?
আমি সর্বক্ষণ শুটিংয়ে থাকি, আমি পরিচালকের সঙ্গে বসে থাকি। আমি আমার কিছু কিছু ক্রিয়েটিভ জাজমেন্ট জানাই। নির্দেশকের সঙ্গে আলোচনা করি। যেহেতু অর্পণ প্রথমবার একটা এত বড় শো পরিচালনা করছে, ফলে প্রি-প্রোডাকশন ফেজ-এ আমি এবং আমার টিম মিলে শুটিংটাকে সাজিয়েছিলাম। সিনেমাটোগ্রাফি থেকে শুরু করে কস্টিউম ডিপার্টমেন্ট পর্যন্ত, সবেতেই আমার একটা ক্রিয়েটিভ জাজমেন্ট আমি দিই।
এই যে ফরম্যাটের বদল, মানে স্টেজ থেকে স্ক্রিন তারপর ওটিটি, এর মধ্য ওটিটি আপনাকে কতটা স্বাধীনতা দিয়েছে বলে মনে হয়?
গোড়ার দিকে যখন ওটিটি এসেছিল তখন মনে হয়েছিল এটা বোধহয় খুব স্বাধীন ক্ষেত্র হবে, বিভিন্ন রকমের কাজ করা যাবে- কিন্তু যত সময় যাচ্ছে বোঝা যাচ্ছে তা হয়তো হবে না। বৃহৎ অর্থে সেন্সরশিপ না থাকলেও, ছোটখাটো নানা রকম বিধিনিষেধ আছে। ব্রডকাস্টিং ক্ষেত্রে একটা নতুন বিল পাস করার পরিকল্পনা আছে সরকারের। সেই আইটি ল লাগু হলে অনেক কিছুই আর করা যাবে না। নেটফ্লিক্স, আমাজনও যত এক্সপেরিমেন্টাল কন্টেন্ট দিয়ে শুরু করেছিল, বর্তমানে তার সংখ্যাটা অনেক কমেছে। চেনা গতের গল্পই ঘুরে ফিরে আসছে। ফলে ওটিটি-কে প্রথম দিকে নতুন গল্প বলার দিক থেকে যতটা পোটেনশিয়াল বলে মনে হচ্ছিল, এখন আর অতটা সম্ভাবনাময় লাগছে না।