বুধবার দার্জিলিঙে সরস মেলার উদ্বোধন করতে গিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য টাকা দেয় না। বিজেপি শুধু ভোটের সময় কাজ করে। কিন্তু শাসকদল সারা বছর কাজ করে। এছাড়াও এদিন পাহাড়ের মাটিতে দাঁড়িয়ে কর্মসংস্থানের উপর জোর দেন মমতা। সেই সঙ্গেই পর্যটনের সমৃদ্ধির বিষয়েও কথা বলেন।
উত্তরবঙ্গে এই নিয়ে সপ্তম বার সরস মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এই প্রথম দার্জিলিঙে এই মেলা হচ্ছে। এর আগে ছয় বার শিলিগুড়িতে সরস মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। এদিন সরস মেলার উদ্বোধন করতে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সরস মেলা ওয়ান স্টপ ডেস্টিনেশন। বিশ্বের কোথাও এরকম মেলা হয় না। সেই কারণে দার্জিলিঙে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। যাতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা এসে এই মেলা দেখতে পারে। পর্যটনকে গুরুত্ব দিতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মমতার কথায়, ‘আপনারা খুব ভালো কাজ করেন। সারা বিশ্বের দরবারে আপনাদের কাজ পৌঁছে দেওয়ার জন্য এতগুলো স্টল তৈরি করা হয়েছে।’ পাশাপাশি এদিন আনন্দ ধারা প্রকল্পের বিষয়েও কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রকল্পের আওতায় রাজ্যে ১২ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে। যা দেশের মধ্যে সর্বাধিক বলেও দাবি করেন মমতা। স্বনির্ভর হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে মহিলাদের ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা চান ছাত্র যুবরা যাতে আরও এগিয়ে যেতে পারেন। ছাত্র যুবদের জন্য তিনি কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, স্টুডেন্ট স্মার্ট কার্ড ইত্যাদি একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। আজ ১৪ নভেম্বর শিশু দিবস। বুধবারই শিশু দিবসের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মমতা। এদিন দার্জিলিঙের চায়েরও প্রশংসা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এখানকার চা খুব ভালো। অনেকদিন আগে আমি আমেরিকায় গিয়েছিলাম। ওখানে দেখলাম ওয়েটিং লাউঞ্জে যে চা দেওয়া হচ্ছে তাতে দার্জিলিং টি লেখা। খুব ভালো লাগল। তবে দার্জিলিং চায়ের নাম করে কেউ কেউ খারাপ চা বিক্রি করছেন। একটা সিস্টেম আমরা তৈরি করব যেখানে দার্জিলিংয়ের চায়ের কেউ বদনাম করতে না পারে।’
পাহাড়ের পর্যটনের বিকাশ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘১৪০০ জনকে হোমস্টের জন্য ইনসেনটিভ দেওয়া হয়েছে। আমরা অনেক রাস্তাও তৈরি করেছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের টাকা দেয় না। হ্যান করেঙ্গে, ত্যান করেঙ্গে। কিন্তু কিছু কাজ করে না। আমাদের প্রার্থী কীভাবে জিতবে। ও তো মিথ্যে বলতে পারে না। এখন মিথ্যের যুগ। ফেক নিউজের যুগ। ভোটের সময় ওরা আসে আর টাকা বিলি করে। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির সময়, জলের সরবরাহ করার সময়, জিটিএর জন্য, পাহাড়ের জন্য, কন্যাশ্রীর জন্য কিছু মিলবে না। ওরা শুধু ভোটের সময় কাজ করে। আর আমরা সারা বছর কাজ করি। ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩৬৪ দিনই আমরা কাজ করি। আমাদের তৃণমূলের সঙ্গে অনীত থাপার অ্যাডজাস্টমেন্ট আছে। আমি চাই তিনি এগিয়ে যান। এখানে একটা সময় ছিল যখন অশান্তি হত। আমরা পাহাড়ে শান্তি চাই। উন্নতি চাই। এখানেই আমাদের সঙ্গে ওঁদের পার্থক্য। আর এই পার্থক্য থাকবেও। আপনাদের হিল ইউনিভার্সিটি করে দিয়েছি। কার্সিয়াঙে প্রেসিডেন্সির ক্যাম্পাসও তৈরি হয়ে গিয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি চালু করা জন্য ডিএম–কে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বলেছি।’
উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের প্রশংসা করে মমতা বলেন, ‘দার্জিলিঙে প্রচুর প্রতিভা আছে। সকলে ফ্লুয়েন্ট ইংরাজি বলেন। বড়বড় স্কুল আছে। এখানকার ছেলে-মেয়েরা কত স্মার্ট। ওরা যে কোনও চাকরি পেতে পারেন। তোমরা পড়াশোনা করো, আমি স্টুডেন্ট কার্ড করে দিচ্ছি। কারও কাছে ভিক্ষা চাওয়ার দরকার নেই। মিরিক, দার্জিলিং ইত্যাদি জায়গায় স্কিল ট্রেনিং সেন্টার হোক। ওখানে ৩ মাসের প্রশিক্ষণ নিলে চাকরি পাকাপাকি হয়ে যাবে।’ সরস মেলার মঞ্চ থেকে সব কাজকেই সমান বলে বর্ণনা করেন মমতা। এই কথা বলতে গিয়ে তিনি নিজের বাড়ির একটি গল্পও শোনান। তিনি এক মেয়ের গল্প শোনান, যে উচ্চমাধ্যমিকের পর ফ্যাশন টেকনোলজি নিয়ে পড়তে চেয়েছিল। কিন্তু তাঁর মা রাজি ছিলেন না। মমতাই ওই মেয়েটিকে ফ্যাশন টেকনোলজি নিয়ে পড়ার সুযোগ করে দেন। মমতার দাবি, বর্তমানে সেই মেয়ে নিয়ইয়র্কে রয়েছেন।
মমতা আরও বলেন, ‘এখানে মহিলা, যুব সকলেই খুব প্রতিভাবান। এটাই আপনাদের সৌন্দর্য। শুধুমাত্র কাঞ্চনজঙ্ঘা আপনাদের সৌন্দর্য নয়। কাঞ্চনজঙ্ঘা তো বিশ্বের সৌন্দর্য। আপনাদের সৌন্দর্য হল আপনাদের প্রতিভা। নাসা থেকে ভাষা, ওয়াশিংটন, নিউ ইয়র্ক সর্বত্র রয়েছেন আমাদের ভারতীয়রা। সবথেকে বেশি প্রতিভা আমাদের বাংলার। চায়ের দোকান থেকে কত টাকা আসে। ডিপ্রেসনের ব্যাপার নেই। সবসময় এনার্জেটিক থাকুন। আমি দার্জিলিংকে বিশ্বের মধ্যে সব থেকে উপরে দেখতে চাই।
এদিন সকালে দার্জিলিঙের পদ্মজা নায়ডু জুলজিক্যাল পার্কে গিয়ে দুটি স্নো লেপার্ডের নামকরণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। একজনের নাম রাখেন ‘ডার্লিং’ এবং অন্যজনের নাম রাখেন ‘চার্মিং’। এছাড়াও চারটি রেড পান্ডার নামকরণ করেছেন মমতা। তাদের নাম দেওয়া হয়েছে পাহাড়িয়া, ভিক্টরি, ড্রিম এবং হিলি। ক্যাপটিভ ব্রিডিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই চারটি রেড পান্ডা এবং দু’টি স্নো লেপার্ড জন্ম নেয়। মুখ্যমন্ত্রী এই নামকরণ করায় খুশি পার্ক কর্তৃপক্ষ।