আবাস যোজনায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা পৌঁছে যাবার আগে পূর্ব বর্ধমানে ক্ষোভ বিক্ষোভ চলছেই। আর তারই মধ্যে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে তালিকায় থাকা নেতারা নাম তুলে নিতে আবেদন জানাচ্ছেন। একেবারে প্রথম সারির নেতা তো বটেই এমনকি পঞ্চায়েতের পদাধিকারীদের নাম তুলে নেবার হিড়িক দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে যে সব এলাকায় যোগ্য অথচ তালিকায় নাম নেই তাঁরা এখন প্রতিদিন ব্লক প্রশাসনের কাছে আর্জি জানাচ্ছেন। এরই মাঝে যোগ্যদের হয়ে সরব হয়েছে সিপিএম।
ডিসেম্বর মাসে আবাস যোজনার টাকা উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো শুরু হবে। তার আগে রাজ্যের অনান্য জেলার সঙ্গে পূর্ব বর্ধমানে চুড়ান্ত তালিকা তৈরি করতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা মনে করছেন আমরা যোগ্য অথচ তালিকায় তাঁদের নাম নেই, তাঁরা রীতিমত আন্দোলন শুরু করে দিয়েছেন। মেমারি, কালনা, কাটোয়া সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ক্ষোভ বিক্ষোভ জারি আছে। এ পর্যন্ত জেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে দরবার করেছেন গ্রামবাসীরা। সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ গলসি ব্লকে। জানা গেছে গলসি -১ ব্লকের ১২টি গ্রামের একজনেরও নাম নেই আবাস যোজনার তালিকায়। গ্রামবাসীরা এককাট্টা হয়ে ব্লক প্রশাসনের কাছে এ নিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন। যোগ্যদের নাম যাতে ওই তালিকায় তোলা হয় তার জন্য দাবি রাখা হয়। সূত্রের খবর ওই ব্লকে বেশিরভাগ বাসিন্দার পাকা বাড়ি নেই। অথনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা ওইসব মানুষজনের নাম নতুন করে তোলার জন্য সমীক্ষক দলের কাছেও আবেদন রাখা হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন তাদের বঞ্চিত হতে হবে। ব্লক প্রশাসনের তরফে জানা গেছে, এর আগে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার পোর্টালে যে সব উপভোক্তাদের নাম আপলোড হয়েছিল কোনও কারণে তাঁদের নাম বাদ যায়। একই সঙ্গে গলসি ২ ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রামের যোগ্য ব্যাক্তিদের নাম তালিকাভুক্ত হয়নি বলে অভিযোগ। নাম নেই কালনার পূর্বস্থলী ১ ব্লকের যোগ্যদের নাম। আউশগ্রাম ব্লকের জঙ্গলমহলে যেখানে বেশিরভাগ পরিবারের আর্থিক দুরবস্থা সেখানেই বেশিরভাগ গ্রামবাসীদের নাম নেই এবারের সরকারি আবাস যোজনার তালিকায়। ফলে ব্যাপক ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। গলসির দুটি ব্লকে অনেকের নাম না থাকায় সরব হয়েছেন খোদ শাসক দলেরই পঞ্চায়েত জনপ্রতিনিধিরা। গলসির লোয়া কৃষ্ণরামপুর পঞ্চায়েতের প্রধান মিরাজ মল্লিক সাফ জানালেন ১২টি গ্রামের যোগ্যদের নাম ওঠেনি। ওই এলাকার নেতারা আবার বঞ্চনার বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের কাছে আর্জি হিসাবে তুলে ধরেছেন। তবে গলসি ১ ব্লকের বিডিও জয়প্রকাশ মন্ডল বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের কাছে জানানো হয়েছে। জেলা থেকে এই ঘটনা নবান্নে গেছে।
এদিকে পূর্ব বর্ধমানে আবাস যোজনা থেকে প্রকৃত গরিব মানুষের নাম বাদ পড়েছে বলে দাবি তুলেছে সিপিএম। এ নিয়ে কালনা মহকুমার পূর্বস্থলীতে কালনা ২ ব্লক প্রশাসনের দপ্তরে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম। দাবি দাওয়া নিয়ে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। ওই স্মারকলিপিতে পাকা বাড়ির মালিকদের নামধাম দেওয়া হয়েছে, একই সঙ্গে যোগ্যদের নামও দেওয়া হয়। পূর্বস্থলীর সিপিএম নেতা বিন কাশেম বলেন, এখানকার বেশিরভাগ পাকা বাড়ির মালিকদের নাম তালিকাভুক্ত আছে,আর বাদ পড়েছে গরিব মানুষের নাম। আর এজন্যই অভিযোগ জানানো হয়।
তবে এসব ক্ষোভ বিক্ষোভের মাঝেই তৃণমূল কংগ্রেস পক্ষ থেকে একাধিক নেতা যাঁদের পাকা বাড়ি রয়েছে তারা তালিকা থেকে নাম তুলে নিতে শুরু করেছেন। এর আগে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসে সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় দলীয় পর্যায়ে নাম তুলে নিতে আবেদন রাখেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে নাম বাতিলের আর্জি জানিয়ে ব্লকে আবেদন জমা পড়ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে গলসি ২ ব্লকের দুটি পঞ্চায়েতের প্রধান ও পঞ্চায়েত সদস্য আবেদন জমা করেছেন। এই দুজনের মধ্যে একজন হলেন মসজিদপুর পঞ্চায়েত প্রধান মুন্সি মাড্ডি। অন্যজন আজমিরা বেগম, তিনি তেঁতুলমুড়ি পঞ্চায়েতের সদস্য। এছাড়াও গলসি পঞ্চায়েতের প্রধান কমল রুইদাসের মায়ের নাম ছিল আবাস যোজনায়। মা মারা যাবার পর ওই নাম বাদ দেবার জন্য আবেদন করেছেন তিনি। এর আগে কাটোয়া মহকুমার গঙ্গাটিকুরি পঞ্চায়েতের প্রধান গোপাল হাজরা তাঁর নাম আবাস যোজনার তালিকা থেকে বাদ দেবার জন্য বিডিও’র কাছে আবেদন রেখেছেন। পেশায় টোটো চালক ওই প্রধানই প্রথম নাম তুলে নেবার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।