বাংলার প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ হল বুধবার। সকাল ৭টা থেকে কড়া নিরাপত্তায় শুরু হয় ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচন। চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ১৫ হাজার ৩৪৪টি বুথের মধ্যে ৯৫০টি বুথে ভোটগ্রহণ হয় বিকেল ৪টে পর্যন্ত। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী বিকেল তিনটে পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডে ভোট পড়েছে ৫৯.২৮ শতাংশ। সবথেকে বেশি ভোট পরে সরাইকেলায়, ৬৬.৩৮ শতাংশ। রাঁচিতে ভোটদানের হার সবথেকে কম ৫৩.৪ শতাংশ। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন ও প্রাক্তন সাংসদ-সহ মোট ৬৮৩ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হল বুধবার।
বুধবার প্রথম দফার মাওবাদী অধ্যুষিত ৮১টি আসনের মধ্যে ৪৩টি আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হয় নির্ধারিত সময়ে। নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হতেই ঝাড়খন্ডবাসীর উদ্দেশে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে ভোটারদের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভোটারদের নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী বুধবার প্রথম দফার নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল মোট ১ কোটি ৩৭ লক্ষ। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক কে রবি কুমার জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ২০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। বিশেষ নজর ছিল মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে। সেখানে বুথ পাহারা থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় প্রহরা ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের। কে রবি কুমার আরও জানান, ১ হাজার ১৫২টি বুথে নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে পরিচালনা করেন মহিলারা। অন্যদিকে, ২৪টি বুথ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিশেষভাবে সক্ষম ভোট-কর্মীরা।
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী এবং বারহাইত আসন থেকে জেএমএম প্রার্থী হেমন্ত সোরেন এদিন বলেন, ‘আজ আমরা নিজ নিজ কেন্দ্রে আমাদের ভোট দিয়েছি। আমি ঝাড়খণ্ডের জগণের কাছে অনুরোধ করব নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করুন।’ রাঁচিতে এদিন ভোট দেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি।
ঝাড়খণ্ডে এবার লড়াই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ এবং বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র। ইন্ডিয়া জোট ঝাড়খণ্ড নিজেদের দখলে রাখতে পারবে, না কি, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার গড়বে , সেই প্রশ্নের জবাব দেবে ভোটবাক্স। ঝাড়খণ্ডে প্রচারের সময় বারবার গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রচার সভা থেকে হেমন্ত সোরেন এবং ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন তাঁরা। অভিযোগ জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডি জোটের সরকারের মদতে গত পাঁচ বছরে আদিবাসীদের জমি দখল করে নিচ্ছেন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা। শুধু তা-ই নয়, মুখ্যমন্ত্রী হেমন্তের বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারি-সহ দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরব হয় বিজেপি।
পাল্টা অনুপ্রবেশ নিয়ে মোদী সরকারকে পাল্টা খোঁচা দেন হেমন্তও। তিনিও প্রচার চলাকালীন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। এর পাশাপাশি বিজেপির বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডির মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সিদের দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার অভিযোগ তোলে ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব।
প্রথম দফার নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন, প্রাক্তন সাংসদ গীতা কোড়া, রামেশ্বর ওঁরাও, বিজেপির আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসের পুত্রবধূ পূর্ণিমা সাহু দাস, মীরা মুণ্ডা, প্রাক্তন আইপিএস অজয় ও সরযূ রায়। নির্বাচনের ঠিক আগে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন চম্পাই সোরেন। সরাইকেলা আসন থেকে এবারের নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে লড়ছেন তিনি। হাড্ডাহাড্ডি এই লড়াইয়ে কার মুখে বিজয়ীর হাসি ফুটবে তার উত্তর মিলবে ২৩ নভেম্বর।