মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ গত বৃহস্পতিবার, ২৫ বেসিস পয়েন্ট (বা শতাংশ পয়েন্টের এক চতুর্থাংশ) ভিত্তিতে সুদের হার হ্রাস করেছে। এটি মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার ইঙ্গিত দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে, ফেডের এই পদক্ষেপ গ্রহণ।
বিশ্লেষকরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, আগামী মাসগুলিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঋণের খরচ আরও হ্রাস পাবে। কিন্তু চিন্তার বিষয়টি হল, ট্রাম্পের আসন্ন কর হ্রাস পরিকল্পনা, শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা- মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি করতে পারে এবং সরকারি ঋণের খরচ বাড়িয়ে তুলতে পারে। যার ফলে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে। মার্কিন ঋণের সুদের হার ইতিমধ্যেই এই সপ্তাহে বেড়েছে, যা সেই উদ্বেগেরই প্রতিফলন।
ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর সুস্পষ্ট কিছু প্রভাব পড়তে পারে অর্থনীতিতে। ফেড (এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক) ঋণের প্রাপ্যতা এবং ব্যয় নিয়ন্ত্রণের কারণে, প্রাথমিকভাবে কর্মসংস্থান এবং মুদ্রাস্ফীতি প্রভাবিত হবে। ফেডের আর্থিক নীতির প্রধান হাতিয়ার হল ফেডারেল তহবিলের হার, যা ব্যবসার জন্য ঋণ গ্রহণের খরচকে বাড়িয়ে দেবে।
সাধারণত যখন সুদের হার কমে যায়, তখন ঋণ নেওয়া লাভজনক হয়। তাই, সাধারণ মানুষ আরও বেশি পণ্য ও পরিষেবা ক্রয়ে আগ্রহী হয়। ব্যবসার সম্প্রসারণ, সরঞ্জাম কেনা বা নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য তহবিল ধার করার উৎসাহ বাড়ে। অন্যদিকে পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা, মজুরি বাড়ায় এবং অর্থবৃদ্ধির চক্রকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে। যদিও মুদ্রানীতির সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি ও কর্মসংস্থানের সরাসরি কোনও যোগসূত্র নেই, তবুও আর্থিক নীতি হল মূল্যহ্রাস রোধ করা বা প্রবৃদ্ধির গতিকে ত্বরান্বিত করা।
ভারতে আরবিআই সর্বশেষ ২০২০ সালের মে মাসে রেপো রেট ৪০ বিপিএস কমিয়ে ৪% করেছিল। সেই সময়ে, যখন কোভিড-১৯ মহামারির কারণে চাহিদা এবং উৎপাদন দুই-ই হ্রাস পেয়েছিল এবং কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আরবিআই তখন থেকে রেপো রেট ২৫০ বিপিএস বাড়িয়ে ৬.৫% করেছে যাতে মুদ্রাস্ফীতির মোকাবেলা করা যায়। আগামী ৪-৬ ডিসেম্বর আরবিআইয়ের মনেটারি পলিসি কমিটির পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্সিকে মার্কিন শেয়ারের জন্য ইতিবাচক, ডলারের জন্য ভালো কিন্তু কোষাগারের জন্য কিছুটা নেতিবাচক হিসাবে দেখা হচ্ছে। ভারতের ক্ষেত্রে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্সির অর্থ সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। বাণিজ্যের লড়াইয়ে ভারতের আধিপত্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে, এই বৈদেশিক মুদ্রার বৃদ্ধি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। এটি ভারতীয় আর্থিক নীতির গতিপথকেও প্রভাবিত করবে, কারণ ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কোনও উল্লেখযোগ্য হার কমানোর পদক্ষেপ নেওয়ার আগে, আর্থিক অনিশ্চয়তা সমাধানের চেষ্টা করতে পারে।
যদিও ট্রাম্প কর হ্রাস করতে এবং শুল্ক কমাতেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা প্রাথমিকভাবে মার্কিন অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করবে। কিন্তু বিশ্লেষকরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, এটি উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। ভারত-সহ অন্যান্য দেশের আর্থিক স্বচ্ছলতার পরিকল্পনার উপর এর প্রভাব পড়তে পারে।