সল্টলেকের ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রের। স্কুল থেকে ফেরার পথ ঘটে এই দুর্ঘটনা। দুটি বাসের রেষারেষির জেরে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত শিশুর নাম আয়ুষ পাইক। আনুমানিক বয়স ১১ বছর। বাড়ি মানিকতলা এলাকায়। মঙ্গলবার সল্টলেক দুই নম্বর গেটের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ছাত্রটি তখন মায়ের সঙ্গে স্কুটি চেপে বাড়ি ফিরছিল। সেসময় সল্টলেক-হাওড়া রুটের একটি বাসের ধাক্কায় স্কুটি থেকে পড়ে যায় সে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আঘাতের জেরে শিশুটির মাকেও হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তিনি এখন চিকিৎসাধীন।
এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত সল্টলেকের বাসিন্দারা। পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাঁরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেও কোনও সুরাহা মেলেনি। এদিন বিক্ষুব্ধরা শুধু রাস্তা অবরোধ করেই ক্ষান্ত হননি, তাঁরা বাসটিতেও ব্যাপক ভাঙচুর করেছেন।
মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার দুর্ঘটনায় ছাত্রের মৃত্যুর খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মৃত ছাত্রের পরিবারকে ফোন করে তাঁদের পাশে থাকারও আশ্বাস দিয়েছেন। প্রসঙ্গত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন উত্তরবঙ্গ সফরে রয়েছেন। সেখানে মঙ্গলবার পাহাড়ে জিটিএ বৈঠকের মাঝেই এই দুঃসংবাদ পান এবং টেলিফোনে পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি পরিবহণ মন্ত্রীকে দ্রুত সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠকের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে দ্রুত বাসের রেষারেষি বন্ধ না হলে, কড়া আইন এনে চালকদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় খুনের মামলা রুজু করার হুমকি দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত বেপরোয়া গতির জেরে শহরে একের পর পথ দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এর আগে বেহালা ও বাঁশদ্রোণীতে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় দুই স্কুল পড়ুয়া। বাঁশদ্রোণীর ঘটনাটি ঘটে গত অক্টোবর মাসে মহালয়ার দিন। একটি জেসিবি-র ধাক্কায় প্রাণ হারায় ওই স্কুল পড়ুয়া। মৃত ছাত্রটি নবম শ্রেণীতে পড়ত। কোচিং সেন্টারে যাওয়ার পথে সে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। রাস্তায় তখন কাজ চলছিল। সেখানে জেসিবি-র ধাক্কায় তার মাথায় গুরুতর চোট লাগে। আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল যে, তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে গত বছর বেহালাতেও আরও একটি ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রের নাম সৌরনীল সরকার। সে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ত। চলার পথে তার বাবা ও সেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। একটি ঘাতক লরি তাকে পিঁষে দেয়। সৌরনীলের বাবাও লরির ধাক্কায় আহত হন। তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক জনবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ডায়মন্ড হারবার রোডে শিশুটির মৃতদেহ আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখায় ক্ষিপ্ত জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশের বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়। কিন্তু তাদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে স্থানীয়রা। এমনকি একটা সময় পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। পুলিশের মোটর গাড়ি ও ভ্যান ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় সরকারি বাসেও। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ারও অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় জখম হন বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী। শেষে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে ক্ষিপ্ত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। এভাবে প্রায় চার ঘন্টা পর শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।