সোমবারই ছিল প্রচারের শেষ দিন। আর সোমবারই রাজ্যের ৬টি বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের ভোট দিতে বললেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে তাঁকে ৬ জন প্রার্থীর মধ্যে কারও হয়েই প্রচার করতে দেখা যায়নি। কোনও প্রচার সভা বা মিছিলেও উপস্থিত ছিলেন না তিনি। তবে প্রচারের শেষ দিন সোমবার উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার আগে তৃণমূল প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানালেন মমতা। পাশাপাশি, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ধাঁচে তৈরি প্রকল্প নিয়ে মহারাষ্ট্রকে খোঁচা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও উপনির্বাচনের প্রচারে দেখা যায়নি। নৈহাটি, তালড্যাংরা সহ মোট ৬টি বিধানসভা এলাকায় গিয়ে দলের একাধিক নেতা মন্ত্রী প্রচার করেছেন। এবার প্রচারের শেষ লগ্নে প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইলেন তৃণমূল নেত্রী। এদিন উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে মমতা দাবি করেন, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই মহিলাদের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ব্যবস্থা রয়েছে। অন্যান্য রাজ্যে শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু টাকা দেওয়া হয় না।
সোমবার উত্তরবঙ্গে যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি রাজ্যের ৬টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনের কথা মনে করিয়ে দেন। পাশাপাশি প্রতিটি আসনের ভোটারদের কাছে তিনি অনুরোধ করে বলেন, ‘সরকার সবসময় আপনাদের সঙ্গে আছে। কথা দিচ্ছি ৩৬৫ দিন আমরা আপনাদের সঙ্গে থাকব। তাই দয়া করে ভোটটা আপনারা তৃণমূল কংগ্রেসকে দেবেন। তাতে আপনাদের এলাকার কাজ আরও ত্বরান্বিত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংসদীয় নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীদের জেতানোর জন্য আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাঁরা তাঁদের মতো কাজ করছেন, আগামীদিনে আরও করবেন।’
মমতা এদিন দাবি করেন, তিনি প্রায় দেড় বছর পরে দার্জিলিঙে যাচ্ছেন। গত নির্বাচনেও তিনি সেখানে যাননি বলে জানান। তাঁর কথায়, ‘আমি সবসময় চাই দার্জিলিং ভালো থাকুক। তরাই, ডুয়ার্স, চা বাগান সব ভালো থাকুক। সব মানুষ ভালো থাকুক।’
উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোটের আগে সরগরম সেই রাজ্যের রাজনীতি। প্রতিশ্রুতি ও পাল্টা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে প্রচারে টিকে থাকার চেষ্টায় শাসক ও বিরোধী শিবির। এর আগে পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের ধাঁচে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ‘লাডকি বহিন’ প্রকল্প চালু করেছিল। এই প্রকল্পের আওতায় উপভোক্তাদের প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা করে দেওয়া হত। সামনেই রয়েছে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনে শাসক শিবির জিতলে ‘লাডকি বহিন’ প্রকল্পে ভাতার পরিমাণ ১৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২১০০ টাকা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে ‘মহা বিকাশ আঘাড়ী’ জোটের প্রচার মঞ্চ থেকে জানানো হয়, তাঁরা ক্ষমতায় এলে ‘মহালক্ষ্মী যোজনা’ প্রকল্প চালু করবে। এর আওতায় মহিলারা প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে পাবেন। মহারাষ্ট্রে ভোটের আবহে এই প্রতিশ্রুতির লড়াইকে কটাক্ষ করলেন মমতা। তাঁর দাবি, প্রচারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়। ভারতের অন্য কোনও রাজ্যে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো মাসে মাসে টাকা দেওয়া হয় না।
যদিও মহারাষ্ট্রে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে মমতাকে সরাসরি প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘অন্য কোনও রাজ্যের বিষয়ে কোনও টিপ্পনী কাটতে চাই না। নির্বাচনের আগে এ রকম মন্তব্য করা উচিতও নয়। তবে নিশ্চয়ই চাইব, মানুষ বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিন।’
উল্লেখ্য, সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিন দুপুর ২টো নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বাগডোগরা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে ভিড় জমিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন পাহাড়ের বিভিন্ন উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিরা। বিমানবন্দর থেকে তিনি সড়কপথে কার্শিয়াঙের রিচমন্ড হিলের উদ্দেশে রওনা দেন। এই সফরে মুখ্যমন্ত্রীর বেশ কয়েকটি কর্মসূচি রয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টেয় দার্জিলিঙে জিটিএ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা মমতার। এদিন মুখ্যমন্ত্রী কোনও বিশেষ নির্দেশ দেন কি না তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। এরপর আগামী বুধবার দুপুরে দার্জিলিঙের চৌরাস্তায় সরস মেলার উদ্বোধন করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৪ নভেম্বর শিলিগুড়ি হয়ে ফের কলকাতায় ফিরবেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই সফরে রয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, উদয়ন গুহ সহ অন্যরা।