বিচার প্রক্রিয়ার প্রথম দিনেই ফের সরব সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। ফের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেন মামলার একমাত্র অভিযুক্ত। প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে শিয়ালদহ আদালত থেকে বেরিয়ে প্রিজন ভ্যানে ওঠার সময় সংবাদ মাধ্যমের সামনে চিৎকার শুরু করে দেন সঞ্জয়। তিনি দাবি করেন, তাঁকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসিয়েছেন তৎকালীন পুলিশ কমিশনার। সঞ্জয় বলেন,’বিনীত গোয়েল আমাকে সাজিশ করে ফাঁসিয়েছে!’ আর তাঁর এই চাঞ্চল্যকর মন্তব্যে আরজি কর মামলা নিয়ে ফের নতুন করে জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবারে আরজিকর-এর মহিলা জুনিয়র ডাক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। শিয়ালদহের একটি বিশেষ আদালতে শুরু হয়েছে এই বিচার। মামলায় এখনও পর্যন্ত “একমাত্র প্রধান অভিযুক্ত” সিভিক পুলিশ সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের প্রক্রিয়াটি গত ৪ নভেম্বর শেষ হয়েছিল। ১১ নভেম্বর সোমবার বিচার প্রক্রিয়া শুরুর তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই মতো এদিন দুপুর ২টো নাগাদ শিয়ালদহ আদালতে শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া।
এই বিচার প্রক্রিয়াটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে। সেজন্য প্রায় প্রতিদিনই চলবে বিচার ও শুনানি প্রক্রিয়া। ফলে গত ৯ আগস্ট আর জি করের জুনিয়র মহিলা চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধারের ৯৪ দিনের মাথায় এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হল। এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার ৩৫ দিন আগে এই বিষয়ে আদালতে প্রথম চার্জশিট পেশ করেছিল সিবিআই অর্থাৎ সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন। সেই চার্জশিটে সঞ্জয় রায়কে ধর্ষণ ও হত্যার অপরাধে “একমাত্র প্রধান অভিযুক্ত” হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
সোমবার শিয়ালদহ কোর্টের বিশেষ আদালতে এই বিচার প্রক্রিয়ার প্রথম দিন শেষ হয়। করা হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। প্রথম দিনের সাক্ষ্য প্রদানে হাজির হন নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসকের বাবা-কে। তাঁরাই প্রথম দুই সাক্ষী হিসেবে বয়ান রেকর্ড করেন। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকেও এদিন আদালতে হাজির করা হয়। এদিন আদালতে সম্পূর্ণ রুদ্ধদ্বার অবস্থায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। অর্থাৎ মামলার সঙ্গে কোনওভাবে যুক্ত নন, এমন ব্যক্তিদের এই বিচার প্রক্রিয়ার সময় আদালত কক্ষের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বিচার প্রক্রিয়ায় সবার আগে নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মায়ের সাক্ষ্যগ্রহণটাকে প্রধান্য দিয়েছে আদালত। সেজন্য দুপুর ১২টা নাগাদ নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসকের বাড়িতে যান সিবিআই-এর একজন আধিকারিক। সেখান থেকে তাঁকে গাড়িতে করে সিবিআই দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর দুপুর দুটো নাগাদ তাঁকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আদালতে নিয়ে আসা হয়। তাঁর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে নির্যাতিতার মায়ের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। এই মামলায় মোট ১২৮ জন সাক্ষী রয়েছেন। একে একে তাঁদের প্রত্যেকের বয়ান রেকর্ড করবে আদালত। এই ১২৮ জনের মধ্যে রয়েছেন বেশ কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তার, কলকাতা পুলিশ এবং ফরেন্সিক বিভাগের আধিকারিকরা।
নির্যাতিতার পক্ষ থেকে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার। ছিলেন নির্যাতিতার ‘কাকু’ বলে পরিচয় দেওয়া প্রতিবেশী সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। তিনিও এদিন আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন। যদিও ঘটনার তদন্ত চলাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ওঠে। এমনকি মৃতদেহ পোস্ট মর্টেমে যুক্ত মেডিক্যাল অফিসারও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে দাবি করেন যে, ৯ আগস্ট অর্থাৎ দেহ উদ্ধারের দিনেই ময়নাতদন্ত না হলে রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে।
তবে এই মামলায় নিরপেক্ষভাবে বিচার প্রক্রিয়া চালানো নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে অনেক প্রতিবাদী মানুষ। সেজন্য সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে একটি মৌখিক আবেদনের ভিত্তিতে একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলার শুনানি শুরু হয়েছিল। যাতে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়াটি পশ্চিমবঙ্গের বাইরের যে কোনও আদালতে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু আবেদনটি ভারতের বিদায়ী প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় প্রত্যাখ্যান করেন।
গত শনিবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও বিচারটি পশ্চিমবঙ্গের বাইরে স্থানান্তরিত করার দাবি তোলেন। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে ক্ষমতায় থাকলে এই মামলায় কখনও ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না।
এদিকে এর আগেও এই মামলার প্রথম চার্জশিট পেশ করে সঞ্জয় রায়কে প্রধান দোষী সাব্যস্ত করতেই মুখ খোলেন। দাবি করেন, তিনি ধর্ষণ বা হত্যা করেন নি। প্রশাসন তাঁকে মিথ্যাভাবে জড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনায় কলকাতা পুলিশের দিকে আঙুল তুলে দাবি করেন, তিনি একজন সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজে যুক্ত ছিলেন। ঘটনার পর তাঁর নিজের বিভাগীয় সহকর্মীরা তাঁকে এই বিষয়ে নীরব থাকার জন্য হুমকি দেয় বলে দাবি করেন।