রাজ্যের উপনির্বাচনের মুখেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ঘৃণাভাষণের অভিযোগ তুলে সোমবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ তৃণমূল কংগ্রেসের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল। তৃণমূলের স্পষ্ট অভিযোগ, রাজ্যের নির্বাচনী আবহে অযথা বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দু অধিকারী ঘৃণাভাষণ দিয়ে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন। শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এমন একাধিক অভিযোগ তুলে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা, দলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার এবং দলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ সোম-সকালেই মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে এসে চিঠি দিলেন।
অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কুনাল বলেন, ‘এই ধরনের কমিউনাল হেট স্পিচ ব্যবহার করে আগুন জ্বালাবার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগুনে ঘি ঢালার কাজটাও বিজেপির চক্রান্তের মধ্যেই থাকে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী তাঁদের হাতে। অন্য রাজ্য থেকে লোক ঢুকিয়ে গণ্ডগোল করার পরিকল্পনাও তাঁদের হাতে। তাই মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করে সেন্সর করুক। অন্য রাজ্য থেকে বহিরাগতদের ঢুকিয়ে নির্বাচনে বিজেপি যদি কোনও অশান্তির সৃষ্টি করে এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর অপব্যবহার করে, তার দায় কে নেবে? এই ধরনের বক্তৃতা হচ্ছে চক্রান্তের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন।’ এক কথায়, উপনির্বাচনে গভীর চক্রান্তের ইঙ্গিত পেয়ে তৎপর হয়েছে তৃণমূল।
তবে ঠিক কি বলেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী যার জন্য নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হলো তৃণমূল? উল্লেখ্য, গত শনিবার তালড্যাংরায় বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে আয়োজিত নির্বাচনী প্রচারে শুভেন্দু যে বক্তব্য রেখেছেন, তার একাংশকে তুলে ধরে তৃণমূল মূলত আপত্তির কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনে। সেই ভাষণে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের ছবিগুলি দেখেছেন তো? ৫৯৬ টি মন্দির ভেঙেছে। হিন্দুদের উপর কী অত্যাচার করেছে! এবার পশ্চিমবঙ্গকে দ্বিতীয় বাংলাদেশ করতে চায়।’ এই বক্তব্য সম্পূর্ণ ‘সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক’ বলেই মনে করছে তৃণমূল। এমনকি বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামকেও আক্রমণ করেন বলে অভিযোগ রাজ্যের শাসকদলের। এর প্রেক্ষিতেই শশী পাঁজাদের দাবি, শুভেন্দুকে ‘সেন্সর’ করুক কমিশন।
এদিন কুনাল এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘যদিও উপনির্বাচনের প্রচার সোমের বিকেলেই শেষ। কিন্তু বিষয়টা শুধু একটা উপনির্বাচনের জন্য নয়। নানা সময়ে বিজেপির নেতারা এই ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্য করে থাকেন। তাঁদের লক্ষ্য, বাংলাকে অস্থির করে তোলা ধর্মের ভিত্তিতে। নইলে কেন অযথা বাংলাদেশের হিংসাত্মক পরিস্থিতির তুলনা টানা হচ্ছে? বাংলাদেশ, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কথা বলা যায় না। সেখানে কী হয়েছে, তার নির্দিষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই। আসলে বিজেপি বুঝে গিয়েছে যে ৬টি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বেঘোরে হারবে, তাই এসব বলছে! আমাদের দাবি, বিরোধী দলনেতার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে।’ উল্লেখ্য, একই দাবি নিয়ে সোমবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনকেও কড়া ভাষায় চিঠি দিয়েছে তৃণমূলের সংসদীয় দল।