বৃষ্টি এলে
গৌতম হাজরা
বৃষ্টি এলে শুনতে যে পাই
টাপুর টুপুর শব্দমালা,
বৃষ্টি এলে মনের ভিতর
গুনগুনানো গানের পালা।
বৃষ্টি এলে দিনটা কাটে
গল্পগাছায় দাদুর সাথে,
বৃষ্টি এলে জল জমে যায়
আমার ঘরের বারান্দাতে।
বৃষ্টি এলে সবুজ মাঠে
হলুদ ফড়িং বেড়ায় উড়ে,
আমি তখন খাতার পাতায়
আঁকছি ছবি বৃষ্টি জুড়ে।
এপার-ওপার
মধুসূদন ঘাটী
এপার ওপার করতে পারি রোজ
ছোট্ট ডিঙি বাইতে পারি জলে,
ছপাৎ ছপাৎ দাঁড় টানি দুই হাতে
দামাল আমি ছুটছি সমতলে।
যখন থাকি স্কুলের মাঠে আমি
দু-পাঁচটা গোল করছি সুনিপুণ,
আবৃত্তিতে প্রথম হলে সবাই
বলছে ডেকে, ‘ধন্নি ছেলের গুণ।’
পাড়ার ছোটো যারা তাদের বলি
ইচ্ছে হলে সব কাজে মন ঢালো,
দেখবে কেমন সহজ হবে চাওয়া
মনের ভিতর ফুটবে নতুন আলো।
ডিঙির ভিতর লুকিয়ে রাখি জেদ
এপার-ওপার আমার ছেলেখেলা,
ধন্যি বলুক দস্যি বলুক সবাই
জল-ডিঙিতে কাটুক ছোট্টবেলা।
চলনা ফড়িং একটু ঘুড়িং
তুহিন কুমার চন্দ
বলছে হরিণ চলরে ফড়িং যাই কোনো দূর দেশে,
চাঁদনি রাতে মেঘের ভেলায় হাওয়ায় ভেসে ভেসে।
বলছে ফড়িং শোনরে হরিণ আমরা তো রোজ উড়ি,
নিতে তোকে সঙ্গে করে লাগবে রঙিন ঘুড়ি।
হরিণ-শিশু অবাক চোখে শুনছে যে তার কথা,
রঙিন ঘুড়ির সূতোয় বেঁধে ভীষণ রসিকতা!
বলছে হরিণ বনের ভেতর রাতপরীরা আসে,
বলছে তারাই মেঘের ভেলায় নিত্য হাওয়ায় ভাসে।
ওদের কাছে নেবোই চেয়ে ছোট্ট দু’টি ডানা,
তাহলে আর উড়তে যেতে থাকবে নাকো মানা।
চল না ফড়িং ওদের সাথে একটুখানি উড়ি,
যাক হারিয়ে সুতোয় বাঁধা নীল সাদা রং ঘুড়ি।
বৃষ্টি সুধা
মিঠু মণ্ডল
মেঘটা এখন মাথার ওপর ঘুরছে শুধু
আমি ভাবি যাবো ভেসে তোমার সাথে
ওই যেখানে শুকনো পাড়ে ধানের জমিন
দুই চোখে তার হাজার রকম স্বপ্ন গাঁথে।।
এসো ও মেঘ পড়ো ঝরে বৃষ্টি হয়ে
কিংবা না হয় ঝরতে পারো গাছের পাতায়
ভেঙে দিও যত আছে হুকুম জারি
টাপুর টুপুর সুরটি তুলে সফেদ খাতায়।।
একলা হয়ে থাকবে কেন বলো দেখি
ঝরনা হয়ো ঝরঝরিয়ে পাহাড় থেকে
শুকনো নদী রাখবে তোমায় বুকের পরে
আদর সোহাগ সকলটুকু দিয়েই এঁকে।।
ওই যেখানে ফুলকলিরা দেখছে চেয়ে
মধুপ যত দিন ও রাতে দিচ্ছে হানা
সাধ হলে যাও মেঘের ঘরেই বসত গড়ে
গাইতে পারো নেই তো কোনো নিষেধ মানা।।
অনেক হল ঘোরাঘুরি একটু থামো
মুখটা তোমার একটু ফেরাও খরার দেশে
বনফুলেরা কেউ ভালো নেই দেখতে কি পাও
ঝরলে তোমায় রাখবে ধরে মুচকি হেসে।।
ভিজে যায়
শ্যামল বণিক অঞ্জন
ভিজে যায় গাছপালা পাখিদের বাসা
ভিজে যায় ডিম ছানা সুখ সাধ আশা।
ভিজে যায় পথ হাট ঘর বাড়ি চাল
ভিজে যায় মাঠ ঘাট নদীনালা খাল।
ভিজে যায় খেটে খাওয়া শ্রমিক আর চাষী
ভিজে যায় শৈশব কচি মুখ হাসি।
ভিজে যায় স্মৃতিগুলো আষাঢ়ের ঢলে
ভিজে যা এসে তুই যায় কেউ বলে!
নেই-নেই
সুদীপ্ত বিশ্বাস
পাখি নেই গাছ নেই
পুকুরের মাছ নেই
কয়লার আঁচ নেই
মন লাগে কাজে না।
বৈশাখী ঝড় নেই
ডাল মড়মড় নেই
ছায়াঘেরা ঘর নেই
সেই সুর বাজে না।
পাড়া প্রতিবেশী নেই
বন্ধুও বেশি নেই
চারিদিক মেশিনেই
ভরে গেছে ভাইরে।
ধান নেই মাঠ নেই
পুকুরের ঘাট নেই
পুরানো সে অতীতেই
চল্ ফিরে যাইরে।
ধানের ক্ষেত
অনিমেষ মন্ডল
বৃষ্টি নামে আকাশ জুড়ে
বৃষ্টি ঝরে ধানের ক্ষেতে,
ভেজা মাটির গন্ধে চাষি
চাষের কাজে উঠছে মেতে।
বীজতলাতে তুলছে ওরা
কচি ধানের সবুজ চারা,
যত্ন করে সাজায় বা কেউ
বোঝা নিয়ে যাবার তাড়া।
করছে রোপণ হাঁটু মুড়ে
জলে ঝপঝপ রুইছে চাষি,
কাদা মাটি ছুঁচ্ছে স্নেহে
কাজ ফুরোলেই মুখে হাসি।
ক্ষেত ভরে যায় সবুজ ছোঁয়ায়
বাতাস দোলায় নরম পাতা,
চাষির বুকটা আশায় ভরে
আশিস দেবেন লক্ষ্মী মাতা।