জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় শাসক-বিরোধী গন্ডগোল তৃতীয় দিনেও অব্যাহত রইল। বিরোধী পক্ষের ৩৭০ ধারা বাতিল এবং শাসকদের তরফে তা পুনর্বহালের প্রস্তাব নিয়ে শুক্রবারও উত্তেজনার সৃষ্টি হল বিধানসভায়। শুক্রবারও বিধানসভার ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখানো হয়। দেওয়া হয় স্লোগান, বিধায়কদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়। তারপর বিজেপির বিধায়করা ওয়াকআউট করেন। আওয়ামি ইত্তেহাদ পার্টির বিধায়ককে মার্শাল দিয়ে বের করে দেওয়া হলো অধিবেশন কক্ষ থেকে। বের করে দেওয়া হলো বিজেপি-র কয়েকজন বিধায়ককেও।
এদিন অধিবেশন শুরু হওয়ার পরই স্পিকার রহিম রাথার ন্যাশনাল কনফারেন্সের বিধায়ক জাভেদ বেগকে বক্তব্য রাখতে বলেন৷ এর মধ্যে বিজেপি বিধায়কদের তরফে সাজাদ লোনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে চিহ্নিত করা হয় বলে অভিযোগ৷ এর জেরে ফের হৈ হট্টগোল শুরু হয়ে যায় ৷ শেষ পর্যন্ত স্পিকার খুরশিদ শেখ-সহ বেশ কয়েকজন বিজেপি বিধায়ককে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন৷ এরপরই মার্শালরা তাঁদের টেনে হিঁচড়ে বের করে দেন ৷
অন্যদিকে, সাজাদ লোন স্পিকারকে অনুচ্ছেদ ৩৭০ ধারা নিয়ে তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন ৷ যার প্রতিক্রিয়ায় স্পিকার জানান, তিনি এই বিষয়ে একটি রুল জারি করবেন। এদিকে বিজেপি পিপলস কনফারেন্স, পিডিপি এবং এআইপি-র সদস্যদের দেওয়া প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতায় এদিনও সোচ্চার হয়েছিল ৷ বিরোধী সদস্যদের ক্রমাগত বাধার মধ্যেই এনসি বিধায়ক জাভেদ বেগ বক্তব্য রাখেন ৷
এদিন বিজেপি ৩৭০ ধারা বাতিলের দাবিতে, অন্যদিকে পিসি, পিডিপি এবং এআইপি-র বিধায়করা তা বলবতের দাবিতে প্রস্তাব নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন অধিবেশন কক্ষেই ৷ একে অপরের বিরুদ্ধে চিৎকার করতেও শুরু করেন তাঁরা ৷ এরপরই স্পিকার হট্টগোলকারী সদস্যদের সরাতে মার্শালদের নির্দেশ দেন। খুরশিদ শেখকেও অধিবেশন কক্ষের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ অন্যদিকে, বিজেপি বিধায়করা সাজাদ লোনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদ মেনে নেওয়া হবে না ৷’
এদিন ঘটনার সূত্রপাত হয় বুধবার পাশ হওয়া ওমর অবদুল্লা সরকারের প্রস্তাব ঘিরে। বুধবার বিধানসভায় প্রস্তাবটি পেশ করেন জম্মু–কাশ্মীরের উপমুখ্যমন্ত্রী সুরিন্দর চৌধুরী। জম্মু–কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ফেরাতে আলোচনার জন্য কেন্দ্রের কাছে দাবি জানানোর কথা বলা হয় সেখানে। প্রস্তাব পাশও হয়ে যায়। সেই প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবিতে এদিন ওয়েলে নেমে এসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা। পাল্টা নেমে পড়েন নির্দল এবং রশিদের দলের বিধায়ক খুরশিদ শেখ। ফের ধস্তাধস্তি বেধে যায় বিধায়কদের মধ্যে। বাধ্য হয়ে স্পিকার তাঁদের মার্শাল দিয়ে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। ফলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায় কাশ্মীর বিধানসভায়। কেউ কেউ টেবিলের উপরে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভে সামিল হন বলেও শাসক শিবিরের অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত এদিন ফের অধিবেশন মুলতুবি করে দিতে হয়।
গত তিন দিন ধরেই ৩৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে তুলকালাম পরিস্থিতি জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভায়। শাসকদল ন্যাশনাল কনফারেন্স সরকারের তরফে ৩৭০ ধারা ফেরানোর দাবি তোলা হয়। একইসঙ্গে উপত্যকার বিশেষ মর্যাদা নিয়েও কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা শুরুর কথা প্রস্তাব করা হয়। ওমর আবদুল্লা সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়, জাতীয় সংহতির কথা মাথায় রেখে কাশ্মীরবাসীর স্বার্থে এই আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিধায়ক খুরশিদ শেখের হাতে থাকা একটি পোস্টারকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়। তাঁর হাতে ছিল ৩৭০ ও ৩৫এ অনুচ্ছেদ ফেরানোর দাবি লেখা ব্যানার। অধিবেশনের শুরুতে তিনি ওই পোস্টার হাতে তুলে দেখাতে গেলেই হট্টগোল শুরু হয়। স্পিকার ১৫ মিনিটের জন্য অধিবেশন মুলতুবি করলেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। স্পিকারকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা নিয়মকানুনের ঊর্ধ্বে নন। আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না, যা আমি করতে চাই না।’ বৃহস্পতিবারও কয়েকজনকে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।