• facebook
  • twitter
Friday, 8 November, 2024

দিল্লি হাইকোর্টের রায়ে রুশদির বইয়ের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠল ৩৬ বছর পর

নিষেধাজ্ঞার নোটিফিকেশনটিকে ‘নিরর্থক’ ঘোষণা করে আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, নোটিফিকেশনটি খুঁজে না পাওয়ায় ধরে নিতে হবে যে এটির কোনও অস্তিত্ব নেই, বা এর যথার্থতা যাচাই করে দেখাও সম্ভবপর নয়।

চিত্র: ইন্টারনেট।

আইনি বৈধতা পেল রুশদির ‘বিতর্কিত’ বই। দীর্ঘ ৩৬ বছর পরে উঠল নিষেধাজ্ঞা। ‘দ্য সেটানিক ভার্সেস’ বইটি ভারতে আমদানি করতে রইল না আর কোনও বাধা। মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এই মর্মেই দিল রায়।

১৯৮৮ সালে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) ভারতে ‘দ্য সেটানিক ভার্সেস’ বইটির আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ৫ বছর আগে ২০১৯ সালে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সন্দীপন খান নামক একজন পাঠক। ওই পাঠক জানান, বিভিন্ন বইয়ের দোকানে তিনি ওই বইটির খোঁজ করছিলেন। কিন্তু সর্বত্রই তাঁকে জানানো হয়, ওই বইটি ভারতে বিক্রি করা বা আমদানি করা নিষিদ্ধ। এই ব্যাপারে তিনি সরকারি ওয়েবসাইটে ঘাঁটাঘাঁটি করেও এই নিষেধাজ্ঞার কোনও প্রমাণ খুঁজে পাননি।

নিষেধাজ্ঞার নোটিফিকেশনটি ১৯৬২ সালের কাস্টমস আইনের অধীনে ৫ অক্টোবর, ১৯৮৮ তারিখে জারি করা হয়েছিল। যদিও, ২০২২ সালে সরকারি তরফ থেকে আদালতের সামনে স্বীকার করা হয় যে নোটিফিকেশনটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতেই দিল্লি হাইকোর্টের এহেন রায়। নিষেধাজ্ঞার নোটিফিকেশনটিকে ‘নিরর্থক’ ঘোষণা করে আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, নোটিফিকেশনটি খুঁজে না পাওয়ায় ধরে নিতে হবে যে এটির কোনও অস্তিত্ব নেই, বা এর যথার্থতা যাচাই করে দেখাও সম্ভবপর নয়।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লন্ডনের ভাইকিং/পেঙ্গুইন গ্রুপ থেকে বইটি প্রকাশিত হয়। লন্ডন এবং মুসলমানদের পুণ্যক্ষেত্র মক্কার পটভূমিকায় লেখা ‘সেটানিক ভার্স’ বইটি নিয়ে শুরু থেকেই উঠতে থাকে বিতর্কের ঝড়। বইটির বিশেষ কিছু অংশে মুসলমানদের ধর্মগুরু হজরত মহম্মদকে অপমান করা হয়েছে, যা ধর্মবিরোধিতার শামিল – এমনটাই দাবি তুলতে থাকেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের একাংশ। ইরানের প্রথম সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা খোমেইনি রুশদির বিরুদ্ধে ‘ফতোয়া’ জারি করেন এবং বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের কাছে রুশদি এবং বইয়ের প্রকাশকদের হত্যা করার জন্য আর্জি জানান। রুশদিকে হত্যা করার জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার পুরস্কারমূল্য ঘোষণা করে ইরানের ‘১৫ খোরদাদ সংস্থা’। বাধ্য হয়ে রুশদি গা ঢাকা দেন। ১৯৯১ সালে আততায়ীদের হাতে নিহত হন তাঁর বইয়ের জাপানি অনুবাদক, ইতালীয় অনুবাদক এবং এক নরউইজীয় প্রকাশক। ২০২২ সালে নিউ ইয়র্কের একটি জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে ছোরা হাতে এক আততায়ীর হাতে আক্রান্ত হন রুশদি। সারাজীবনের মতো হারিয়ে ফেলেন একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি এবং একটি হাতের ব্যবহারক্ষমতা, যে ঘটনা তিনি তুলে ধরেছেন ২০২৪ সালে প্রকাশিত তাঁর লেখা ‘নাইফ: মেডিটেশনস আফটার অ্যান অ্যাটেম্পটেড মার্ডার’ নামক বইতে।