• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

শুল্ক দপ্তরের স্টিকার দেওয়া উত্তরপ্রদেশের গাড়ি চড়ে ছিনতাই

ধাওয়া করে এক দুষ্কৃতীকে পাকড়াও করল তিন সিভিক ভলান্টিয়ার

ছিনতাইকারীদের ধাওয়া করে আটক করা গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিলেন নলহাটির তিন সিভিক ভলান্টিয়ার। তিন ছিনতাইকারীর একটি চার চাকার গাড়ি ধাওয়া করে গাড়ি সমেত এক দুষ্কৃতীকে পাকড়াও করলেন তাঁরা। ঝাড়খন্ড সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় ঘটেছে এই ঘটনা। সেই সঙ্গে আক্রান্ত দম্পতিকে ফিরিয়ে দেওয়া হল তাঁদের ছিনতাই টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র।

প্রসঙ্গত ঝাড়খণ্ড রাজ্য সীমানা লাগোয়া বীরভূম জেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত বেআইনি মাদক থেকে শুরু করে আগ্নেয়াস্ত্র পাচারের ঘটনা ঘটছে। এবার জেলার ঝাড়খণ্ড রাজ্য সীমানা লাগোয়া এলাকায় শুল্ক বিভাগের স্টিকার লাগানো গাড়িতে সেনা জওয়ান পরিচয় দিয়ে এক দম্পতির কাছ থেকে সর্বস্ব লুঠ করেও পার পেল না দুষ্কৃতীরা। তিন সিভিক ভলান্টিয়ারের তৎপরতায় গাড়ি সমেত এক ছিনতাইকারী পাকড়াও। তবে অন্য দুইজন দুষ্কৃতী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।

তবে বৃহস্পতিবার ৭ নভেম্বর পুলিশ চম্পট দেওয়া দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করতে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালালেও তাঁদের সন্ধান পায়নি। নলহাটি থানার পুলিশ যে ছিনতাইকারীকে ধরতে সমর্থ হয়েছে, তাঁর বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। আর যে গাড়িটি পুলিশ আটক করেছে, তার নম্বর উত্তরপ্রদেশের। দুষ্কৃতীরা সাধারণত চোরাই বা ছিনতাই করা গাড়ি নিয়ে অপরাধমূলক কাজ করে। পুলিশ এখন খতিয়ে দেখছে, আটক করা এই গাড়িটি বিহার বা উত্তরপ্রদেশ থেকে চুরি বা ছিনতাই করে এখানে এনে ফের ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার করছিল কিনা।

জানা গিয়েছে, এদিন রামপুরহাটের বড়জোল গ্রামের অনুপ মণ্ডল স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে নিয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে এসে বাড়ি ফেরার বাস ধরার জন্য যখন অপেক্ষা করছিলেন। তখন শুল্ক বিভাগের স্টিকার লাগানো ওই গাড়িটি তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ায় এবং সাদা পোশাকের একজন নিজেকে সেনা জওয়ান পরিচয় দিয়ে অনুপ মণ্ডলের কাছে জানতে চান, তিনি কোথায় যাবেন?

অনুপবাবু রামপুরহাট যাওয়ার কথা বললে ওই ব্যক্তি জানান যে, তাঁদের গাড়ি রামপুরহাটেই যাচ্ছে সরকারি কাজে। তাঁরা তাঁদের সঙ্গে যেতে পারেন। অনুপবাবু গাড়িতে শুল্ক বিভাগের স্টিকার দেখে এবং সেনা জওয়ান পরিচয় পেয়ে বিশ্বাস করে স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়েন। আর গাড়িতে ওঠার পরই গাড়িতে থাকা আরও তিনজন অনুপবাবু ও তাঁর স্ত্রীকে পাকড়াও করে তাঁদের কাছে থাকা সর্বস্ব লুঠ করে নেয়। চিৎকার করলে তাঁদের শিশুপুত্রকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ায় তাঁরা টুঁ শব্দ করতে পারেননি।

এদিকে ছিনতাইয়ের পরেই অনুপবাবুদের নলহাটির পেট্রোল পাম্পের কাছে নামিয়ে দিয়ে গাড়িটি ঝাড়খণ্ডের পথ ধরে। অনুপবাবু গাড়ির নম্বরটি দেখে নিয়ে স্থানীয় সিভিক ভলান্টিয়ারদের গাড়ির নম্বর এবং সমস্ত বিষয় জানান। তিন সিভিক ভলান্টিয়ার হুমায়ুন কবির, শেখ মুরসালিম এবং শিস মোহাম্মদ মোটরবাইক নিয়ে ছিনতাইকারীদের গাড়ির পিছু ধাওয়া করে। সিভিক ভলান্টিয়ারদের তাড়া খেয়ে ছিনতাইকারীরা গাড়ি ঘুরিয়ে মুর্শিদাবাদের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে কাঁটাগড়িয়া মোড়ে গার্ড রেল দিয়ে গাড়িটি আটকাবার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। গাড়িটি এরপর লোহাপুর বাজারের দিকে যেতে থাকে। তিন সিভিক ভলান্টিয়ারও মোটরবাইকে গাড়িটির পিছু ধাওয়া করতে থাকে। লোহাপুর বাজার রেল গেটে ছিনতাইকারীদের গাড়িটি আটকে পড়লে গাড়ি থেকে নেমে দুষ্কৃতীদের দলটি তাঁদের এক সঙ্গীকে ফেলে চম্পট দেয়। সিভিক ভলান্টিয়াদের কাছ থেকে বার্তা পেয়ে তখন পুলিশবাহিনীও সেখানে পৌঁছে গিয়েছে। এক দুষ্কৃতীকে পাকড়াও করে উত্তরপ্রদেশের নম্বর প্লেট দেওয়া ওই গাড়িটি আটক করে। পুলিশ পলাতক অন্য দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করতে জোর তল্লাশি শুরু করেছে। আটক করা ওই গাড়ি থেকে অনুপ মণ্ডলের কাছ থেকে লুঠ করা সমস্ত সামগ্রী পাওয়া যায় বলে জানা গিয়েছে।