শিশুর জন্মের পরই প্রয়োজন হয় তার যত্নের জন্য নানা সামগ্রী কেনার। সাধারণত, শিশুদের জন্য যে-জিনিসগুলি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়, তা হল বেবি ক্রিম, শ্যাম্পু, বেবি সোপ, হেয়ার অয়েল, ম্যাসাজ অয়েল, পাউডার এবং শিশুর পোশাক। একটু বড় হলেই টুথব্রাশ এবং পেস্ট। এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে পরিচ্ছন্নতার জন্য হ্যান্ড ওয়াশ আর স্যানিটাইজারও মজুত রাখতে হয়।
যারা নতুন মা হয়েছেন, তাদের বুঝতে হবে যে, শিশুর ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাই আপনার শিশুটির নরম ত্বকের জন্য কোনও পণ্য কেনার আগে, বিশেষ ভাবে সচেতন ও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। মনে রাখবেন, বেবি প্রোডাক্টস-এও কিন্তু অনেক ধরনের রাসায়নিক, সুগন্ধি, রঞ্জক, ডিটারজেন্ট প্রভৃতি মেশানো থাকে— যা নবজাতকের ত্বকে র্যাশ, ফুসকুড়ি, রুক্ষতা, জ্বালাভাবের সমস্যা তৈরি করে। এগুলি ব্যবহারের ফলে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। তাই, বাচ্চাদের ত্বকের উপযোগী পণ্যগুলি বেছে নেওয়ার সময়, কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত।
শিশুদের ত্বকে ফুসকুড়ি বা র্যাশ-এর সমস্যা খুবই কমন। এর ফলে ত্বক জ্বালা করে এবং শিশুরা অস্বস্তি বোধ করে। অনেক সময় তারা এই অসুবিধার কথা প্রকাশ করতে না পেরে, ক্রমাগত কাঁদে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার সতর্ক হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জন্মের পর থেকেই শিশুর ত্বক ও চুলে ক্রমাগত পরিবর্তন হতে থাকে। নবজাতকের ত্বকের উপর থেকে বেশ কিছুদিন পর্যন্ত সাদা রঙের একটা পাতলা আস্তরণ উঠে আসে। ভয় পাবেন না। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। একে বলে ভারনিক্স। তেল দিয়ে আলতো করে শরীরে মালিশ করলে এই আস্তরণটি সম্পূর্ণ দূর হয়। এরই সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় রোমও দূর হয়। কিন্তু এই পাতলা পরত দ্রুত দূর করার জন্য কেউ কেউ শিশুকে অতিরিক্ত রগড়ে স্নান করান, যা সঠিক নয়। শিশুর ত্বকের যত্নের জন্য আমাদের কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়, তা জানা মায়েদের পক্ষে খুবই জরুরি।
শিশুর ত্বকে কোনও রাসায়নিক-মিশ্রিত পণ্য ব্যবহার করলে ত্বক শুষ্ক হতে পারে। র্যাশ বেরোতে পারে। তাই শিশুর চুল এবং ত্বকের জন্য হালকা ধরনের সাবান ও শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। শিশুকে খুব বেশি পাউডার লাগানো ঠিক নয়। স্নানের পর একটি নরম সুতির কাপড় দিয়ে ত্বক ভালোভাবে মুছে দেবেন। এরপর অল্প করে পাউডার লাগানো যেতে পারে। তবে মনে রাখবেন, পাউডারটিতে যেন খুব বেশি গন্ধ না থাকে, এতে কিন্তু শিশুদের অস্বস্তি হয়।
বাচ্চা একটু বড়ো হলে অভিভাবকদেরই দায়িত্ব, জীবাণুমুক্ত থাকার অভ্যাস তাদের মধ্যে গড়ে দেওয়া। কিন্তু একেবারে ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে এই দায়িত্ব নিতে হয় মা-বাবাকেই। ছোট্ট শিশু যেহেতু বিষয়টির গুরুত্ব বোঝে না কিংবা নিজে জীবাণুমুক্ত থাকতে পারে না, তাই মা-বাবাকেই দায়িত্ব নিতে হবে। শিশুর হাত ধোয়ানোর পর অবশ্যই নরম তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুছে দেবেন। কারণ, শিশুর হাত দীর্ঘসময় ভেজা থাকলে বাতাসে ভাসমান জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে। বর্তমানে হ্যান্ডওয়াশের পাশাপাশি স্যানিটাইজারেরও ব্যবহার বেড়েছে। এতে জল ব্যবহার করার দরকার হয় না।
শরীরের আরও একটি অমূল্য সম্পদ হল দাঁত। একটু বড়ো হলেই তাই দাঁতের যত্ন নেওয়ার বিষয়েও শিক্ষা দেওয়া উচিত বাচ্চাদের। এখন বাজারে শিশুদের জন্য মেডিক্যাল টুথ ব্রাশ এবং টুথ পেস্ট পাওয়া যায়। বাচ্চারা যেহেতু প্রচুর লজেন্স খায়, তাই দিনে অন্তত দু’বার দাঁত ব্রাশ করিয়ে দেওয়া উচিত। এতে দাঁত যেমন জীবাণুমুক্ত এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হবে, ঠিক তেমনই মুখের দুর্গন্ধও দূর হবে।