• facebook
  • twitter
Sunday, 24 November, 2024

ভারতকে হোয়াইট ওয়াশ করল নিউজিল্যান্ড

লজ্জার হারে রোহিত ব্রিগেড

আবার হারের লজ্জায় ভারতকে মুখ লুকাতে হল নিউজিল্যান্ডের কাছে। বেঙ্গালুরুতে প্রথম টেস্টে যেভাবে হারমানতে হয়েছিল রোহিত ব্রিগ্রেডকে—ঠিক সেইভাবে পুনের মাঠে দ্বিতীয় টেস্টে হেরে গিয়ে সিরিজ হারাতে হয়। তাই তৃতীয় টেস্টে মুম্বইয়ের মাঠে ঘুরে দাঁড়ানোর শপথে ভারতীয় দল জয় দেখতে চেয়েছিল। সেই স্বপ্ন প্রায় হাতের মুঠোয় চলে এসেছিল রোহিতদের কাছে। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত ২৫ রানে হার স্বীকার করল ভারত। ঘরের মাঠে ভারতকে হোয়াইট ওয়াশ করে এক নতুন অধ্যায় রচনা করলেন টমলাথামরা। ২৪ বছর বাদে দেশের মাটিতে টেস্টসিরিজে হোয়াইট ওয়াশের মুখে পড়তে হল ভারতকে। মাত্র ১৪৭ রান করলেই ভারত জিতে যাবে এই অবস্থায় ভারতীয় দল মাত্র ১২১ রানে সবাই আউট হয়ে হার স্বীকার করে নিতে হল। এই হারের মধ্যে দিয়ে ভারতের দৈন্যদশা আরও প্রকট হল। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার আগে এই হার বড় চিন্তার বিষয় হল ভারতের। শুধু তাই নয় অস্ট্রেলিয়া সফরের লড়াইটা বেশ কঠিন হয়ে গেল। পাঁচটা টেস্টের মধ্যে কমপক্ষে চারটি ম্যাচে জয় তুলে নিতে হবে ভারতকে।

২৪ বছর আগে দেশের মাটিতে ভারতকে সিরিজ হারতে হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। হ্যান্সি ক্রোনিদের কাছে দুই টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে হারতে হয়েছিল ভারতকে আর এই প্রথম নিউজিল্যান্ডের কাছে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ হারতে হল ভারতকে। বিশ্বের পয়লা নম্বর দল বলতেই ভারত। এমন কী ভারতের বোলাররা স্পিন বোলিংয়ে দাপট দেখিয়ে বাজিমাত করেছেন। কিন্তু এবারে নিউজিল্যান্ডের স্পিনারদের কাছে জুজু বনে গিয়ে ভারতের ব্যাটসম্যানরা দিশেহারা হয়ে গেছেন। একের পর এক ব্যাটসম্যানরা মাঠে নেমেই আউট হয়ে প্যাভেলিয়নের পথে মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন। রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলিরা চরম ব্যর্থ। রানের খোঁজে তাঁরা কবে ঠিকানা পাবেন তা নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ড ২৩৫ রানে সবাই আউট হয়ে যান। তার জবাবে ভারতীয় দল ২৬৩ রান করে ২৮ রানে এগিয়ে থাকে। তখন অনেকেই আশায় নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। সেই লক্ষ্যে ভারতের দুই স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন ঝলসে ওঠেন দ্বিতীয় ইনিংসে। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা বেশ চাপে পড়ে যান। এমন কী নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস করে ১৭৪ রানে। তখন প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক টমলাথামও ভাবতে শুরু করেছিল এই টেস্টটা তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। রানের অংকটা কোনও বড় অংকের ছিল না। ভারত থেকে মাত্র ১৪৬ রানে এগিয়ে থাকে দ্বিতীয় ইনিংস শেষ করে। নিউজিল্যান্ড দল ১৭৩ রান করে পাততাড়ি গুটিয়ে নেয়। রান সংখ্যা দেখে রবিবার ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামে ভারপতের জয় দেখবার জন্যে ছুটে এসেছিলেন। সামনে জয়ের হাতছানি। স্বপ্ন দেখাটা আমুলক নয়। যে দলে রোহিত বিরাট কোহলি, যশস্বী জয়সওয়াল, ঋষভ পন্থ, সরফরাজ খান ও শুভমান গিলদের মতন সেরা ব্যাটসম্যানরা রয়েছেন, সেখানে অন্য কোনও চিন্তার পাহাড় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। এটা কোনও অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। ভারতের কাছে হারটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ঋষভ পন্থ ছাড়া আর কাউকেই শক্ত হাতে ব্যাট করতে দেখা যায়নি। ঋষভ কতক্ষণ সাহসী ভূমিকা নিয়ে প্রতিপক্ষ দলের বোলারদের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন? সতীর্থ ক্রিকেটাররা যদি উইকেটে না টিকে থাকতে পারেন তাহলে সব প্রয়াস বৃথা হয়ে যায়। তাই হল ভারতের।

নিউজিল্যান্ড দলের ক্রিকেটাররা আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে দ্বিধা প্রকাশ করেন না, তাহলে ঘরের মাটিতে ভারতের খেলোয়াড়রা চুপসে যাবেন কেন? বিশেষ করে শেষ টেস্ট ম্যাচ ভারতের দুই বোলার রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন জয়ের পথ খুলে দিয়েছিলেন, সেখানে পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে ব্যাটসম্যানরা কেন প্রতিপক্ষ দলের বোলারদের কাছে মাথা নুইয়ে ফেললেন।

ওয়াংখেড়ের ২২ গজে উইকেটে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন ভারতের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের আজাজ প্যাটেল। ভারতীয় শিবিরে ধস নামিয়ে দিলেন আজাজ একা। ভাবতে পারা যায় রোহিত, বিরাট, শুভমান, যশস্বী জয়সওয়াল, সরফরাজ খানরা এলেন দেখলেন আউট হয়ে প্যাভেলিয়নে বিশ্রামে গেলে। সেখানে আজাজ একা আতঙ্ক ছড়িয়ে ৫৭ রানে ৬টি উইকেট নিয়ে সবার নজর কেড়ে নিলেন। আজাজের পাশে গ্লেন ফিলিপসের বলে ভালো করে খেলতে পারলেন না ভারতের ক্রিকেটাররা। গ্লেন ৩টি উইকেট পেলেন মাত্র ৪২ রান দিয়ে। নিঃসন্দেহে ওয়াংখেড়ের উইকেট স্পিনারদের জন্যে তৈরি করা হয়েছিল। ভাগ্যিস স্যান্টনার এই টেস্টে ছিলেন না। তিনি যদি আজাজের সঙ্গে জুটি হতেন তাহলে আরও করুন অবস্থা হতো ভারতীয় শিবিরে।

এই হারের ফলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পিছিয়ে পড়তে হল ভারতকে। এতোদিন পয়েন্টের তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারত। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের কাছে ৩-০ ম্যাচে হেরে গিয়ে ভারতের স্তান এখন দ্বিতীয়তে নেমেন এসেছে। শীর্ষে চলে গেল অস্ট্রেলিয়া। তিনে অবস্থান করছে শ্রীলঙ্কা আর চতুর্থ স্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড তাই এই দুই দল ভারতের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে।