• facebook
  • twitter
Friday, 15 November, 2024

উৎসবের মরশুমে প্রাপ্তিতে উজ্জ্বল শালতোড়া নেতাজি সেন্টেনারি কলেজ

আলোচনাচক্রের মঞ্চ থেকে প্রকাশিত হয় 'সাহিত্য অঙ্গন' পত্রিকার বিংশ এবং একবিংশতম সংখ্যা। ন্যাক ভিজিটের কয়েকদিন আগে চূড়ান্ত চাপের মধ্যেও এমন সুন্দর ও সুপরিকল্পিত আয়োজন প্রমাণ করে ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়।

শালতোড়া নেতাজি সেন্টেনারি কলেজ। নিজস্ব চিত্র

নিশীথ সিংহ রায়

কলকাতা থেকে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার দূরে আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে অবস্থিত শালতোড়া নেতাজি সেন্টেনারি কলেজ NAAC এবং আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রের জোড়া সাফল্যে রীতিমতো উৎসবমুখর। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত নব্য এই কলেজ স্বপ্ন দেখেছে NAAC Accreditation পাওয়ার। ২০২৪ এ কলেজ প্রতিষ্ঠার পঁচিশ বছর পূর্তির প্রাক্কালে মিলল সেই বহু-আকাঙ্ক্ষিত স্বীকৃতি। প্রথম মূল্যায়নেই প্রত্যন্ত গ্রামীণ এই কলেজের প্রাপ্তিতে স্বভাবতই সাড়া পড়েছে শিক্ষামহলে।

গত ৪ এবং ৫ অক্টোবর ন্যাকের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল মূল্যায়নের জন্য এসেছিলেন কলেজে। কলেজের পঠন-পাঠন, গবেষণা-উদ্ভাবন, খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল, অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন পদ্ধতি, পরিকাঠামো, শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি, প্রশাসনিক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা, জাতীয় সেবা প্রকল্পের কাজ, বিভিন্ন কমিটির কার্যাবলী, অফিসিয়াল নানান কাগজপত্রের খুঁটিনাটি বিচার বিশ্লেষণ করে গত ১৮ অক্টোবর, ২০২৪ কলেজকে বি-প্লাস গ্রেড প্রদান করেছেন। নানান প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে এই কলেজে পড়াশুনা করে মূলত নিম্নমধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা। কলেজের সত্তর শতাংশ শিক্ষার্থী আদিবাসী এবং অধিকাংশই ফার্স্ট জেনারেশন লার্নার। কলেজের একচল্লিশ জন অধ্যাপক-অধ্যাপিকা এবং চারজন শিক্ষাকর্মী ছাত্রছাত্রী অনুপাতে কমই। তা সত্ত্বেও তীব্র মানসিক ইচ্ছাশক্তি ও হার না মানা মনোভাবকে সম্বল করে এই কলেজের অধ্যক্ষ, পরিচালন সমিতির সভাপতি, অন্যান্য সদস্য, অধ্যাপক অধ্যাপিকা, শিক্ষাকর্মী, অভিভাবক এবং বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যৌথ উদ্যোগে অর্জন করে নিল এক সময়োপযোগী অত্যাবশ্যক সম্মান। ন্যাকের এই স্বীকৃতি কলেজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সব দিক থেকে।
পরিচালন সমিতির সভাপতি সন্তোষকুমার মন্ডল বলেন, “আমি বিশ্বাস করি একতায়। একতার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে আমরা কাজ করেছি বলেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এসেছে।” অধ্যক্ষ ড. কিশোরকুমার বিসওয়াল বলেন, “যে সম্মান অর্জন করা কঠিন, তা আমরা সম্মিলিত ভাবে করতে পেরেছি। এই সম্মান রক্ষাও করতে হবে আমাদের সকলকে। কলেজের মর্যাদা রক্ষা করার বড় দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে।” পাশাপাশি তিনি ধন্যবাদ জানান এই কর্মযজ্ঞে সাহায্যকারী সকল ব্যক্তি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহকে। অভ্যন্তরীণ মূল্যমান নির্ণায়ক কমিটির কো-অর্ডিনেটর ড. তুষার মন্ডল বলেন, “আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেল। কলেজের মুকুটে যে পালক যুক্ত হল তাকে সম্মানের সঙ্গে রক্ষা করতে হবে আমাদের।”

ন্যাকের প্রতিনিধি দল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঋতুসাথী প্রকল্প, স্পোর্টস অকাদেমি, ম্যাগাজিন, কলেজের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, ছাত্রছাত্রীদের সুশৃঙ্খল উপস্থিতি এমন নানান বিষয়ে যেমন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে গেছেন, তেমনি ভবিষ্যতে কলেজের আরও উন্নতির জন্য দিয়ে গেছেন বিভিন্ন সুপরামর্শ। গ্রামীণ এলাকার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সুস্থ রুচিসম্মত সাংস্কৃতিক বোধের বিকাশের দিকটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন ন্যাক প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

সাফল্যের খবর আসতে কলেজের ন্যাক কমিটির কো- অর্ডিনেটর ড. সঞ্জয় প্রসাদ বলেন, “আমার সহকর্মীরা দিন-রাত এক করে কলেজের স্বার্থে যেভাবে কাজ করে গেছেন বিগত দুবছর, তাতে এই ফল আমরা আশা করেছিলাম। ভবিষ্যতে আমারা একইভাবে কলেজকে এগিয়ে নিয়ে যাব।”

ন্যাকের মূল্যায়নের মাত্র কয়েকদিন আগে এই ছোট্ট কলেজটি আবার সফল ভাবে পরিচালনা করেছে একটি একদিনের আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্র ও কবিসম্মেলন। শালতোড়া নেতাজি সেন্টেনারি কলেজের বাংলা বিভাগের উদ্যোগে এবং অভ্যন্তরীণ মূল্যমান নির্ণায়ক কমিটি ও ‘সাহিত্য অঙ্গন’ পত্রিকার সহযোগিতায় ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪, একটি একদিবসীয় আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয়েছিল। বিষয় ছিল “সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্য : সংকট ও সম্ভাবনা”। কলেজের মুক্তমঞ্চে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের অংশ স্বরূপ ছিল ‘সাহিত্য অঙ্গন’ পত্রিকার দশম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের সম্মাননা জ্ঞাপন ও কবিসম্মেলন। আলোচনাচক্রের বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক তাপস রায়, অধ্যাপক বরেন্দু মন্ডল, অধ্যাপক দেবাশিস মল্লিক, অধ্যাপক মোস্তাক আহমেদ এবং বাংলা দেশের সাহিত্যিক মজিদ মাহমুদ বলেন ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে।

এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক জয়দীপ চক্রবর্তী, কলকাতা আকাশবাণী, দূরদর্শন ও সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইন্সটিটিউটের প্রাক্তন ডিরেক্টর দেবাঞ্জন চক্রবর্তী, কবি অলোক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজীব কর, দুর্গাদাস মিদ্যা, হাসি বসু, দীপঙ্কর আরশ, বিভাস বিশ্বাস প্রমুখ।

এই অনুষ্ঠানে ‘সাহিত্য অঙ্গন’ পত্রিকার পক্ষ থেকে উজ্জ্বলকুমার মজুমদার পুরস্কার প্রদান করা হয় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোস্তাক আহমেদকে। সোহারাব হোসেন পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় কথাসাহিত্যিক জয়দীপ চক্রবর্তীকে। ড. তাপস বসু স্মারক সম্মানে সম্মানিত করা হয় অধ্যাপক বরেন্দু মণ্ডলকে এবং ‘সাহিত্য অঙ্গন সাহিত্য সম্মান’ লাভ করেন কবি-সম্পাদক দেবাঞ্জন চক্রবর্তী।

আলোচনাচক্রের মঞ্চ থেকে প্রকাশিত হয় ‘সাহিত্য অঙ্গন’ পত্রিকার বিংশ এবং একবিংশতম সংখ্যা। ন্যাক ভিজিটের কয়েকদিন আগে চূড়ান্ত চাপের মধ্যেও এমন সুন্দর ও সুপরিকল্পিত আয়োজন প্রমাণ করে ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রের ব্যাপক সাফল্য এবং ন্যাকের মূল্যায়নে বি-প্লাস গ্রেড প্রাপ্তি পুজোর মরশুমে শালতোড়া নেতাজি সেন্টেনারি কলেজ পরিবারকে শুধু নয়, কলেজ সংলগ্ন এলাকাবাসীর মনেও অপরিসীম আনন্দের সঞ্চার করেছে।