• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেও স্থায়ী উপাচার্য পাচ্ছে না বিশ্বভারতী

বিশ্বভারতীর স্থায়ী উপাচার্যের পদই যে শুধুমাত্র ফাঁকা রয়েছে তাই নয়, বিশ্বভারতীর আধিকারিকদের বারোটি গুরুত্বপূর্ণ পদও শূন্য থাকার ফলে প্রশাসনিক নানান অসুবিধার মধ্যে দিয়ে চলছে বিশ্বভারতী।

রাষ্ট্রপতি ভবনে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য।

একদা বিশ্বজোড়া খ্যাতির শিখরে থাকা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্ন দিয়ে গড়া তাঁর শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ন্যাকের মূল্যায়নে ক্রমশই নিম্নগামী । এদিকে ইউনেস্কো বিশ্বভারতীকে যে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে, তা আদৌ বিশ্বভারতী ধরে রাখতে পারবে কি না, তা নিয়ে অনেকের মনেই সন্দেহ ও সংশয় দেখা দিয়েছে। কেননা, দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বভারতীতে স্থায়ী কোনও উপাচার্য না থাকার কারণে বিশ্বভারতীকে বিভিন্ন দিক থেকেই সমস্যার মধ্য পড়তে হচ্ছে। এমন কী, বিশ্বভারতীর আচার্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে, তাঁকে পুনরায় বিশ্বভারতীর আচার্য হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বিশ্বভারতীর পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর দপ্তরে পাঠানো হলেও, তা স্বাক্ষরিত হয়ে বিশ্বভারতীতে এসে না পৌঁছনোর ফলে এই মুহূর্তে প্রকৃত অর্থে আচার্যহীন হয়ে পড়েছে বিশ্বভারতী।

বিশ্বভারতীর স্থায়ী উপাচার্যের পদই যে শুধুমাত্র ফাঁকা রয়েছে তাই নয়, বিশ্বভারতীর আধিকারিকদের বারোটি গুরুত্বপূর্ণ পদও শূন্য থাকার ফলে প্রশাসনিক নানান অসুবিধার মধ্যে দিয়ে চলছে বিশ্বভারতী। বিশ্বভারতীর স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে পাঁচ বছরের কার্যকালের মেয়াদ শেষ করে ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর বিদ্যুৎ চক্রবর্তী চলে যাওয়ার পরের দিনই ৯ নভেম্বর বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দু’বছরের জন্য দায়িত্ব নেন কলাভবনের অধ্যক্ষ সঞ্জয়কুমার মল্লিক। তাঁর কার্যকালের মেয়াদ চলতি বছরের ২৫ মে শেষ হলে, কোনও স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ না করে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্বভার ৩১ আগস্ট দেওয়া হয় পল্লিশিক্ষা ভবনের অধ্যাপক অরবিন্দ মণ্ডলকে। কিন্তু তিনিও সরে যাওয়ার পরে পুনরায় ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে পল্লিশিক্ষা ভবনেরই অধ্যাপক বিনয়কুমার সোরেনকে। এদিকে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক তিনজন সম্ভাব্য উপাচার্যের নামের একটি তালিকা বিশ্বভারতীর পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এদের মধ্যে থেকে পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতি একজনকে বিশ্বভারতীর পরবর্তী উপাচার্য হিসেবে মনোনয়ন না দেওয়া পর্যন্ত তা অনুমোদিত হবে না। কিন্তু রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু কোনও নামই অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের কাছে না পাঠানোয় বিশ্বভারতী স্থায়ী উপাচার্য পাচ্ছে না।

জানা যাচ্ছে, বিশ্বভারতীর স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য যে সার্চ কমিটি রয়েছে তাতে রয়েছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা কুমুদ শর্মা। তিনি আরএসএস ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করে তাঁর নাম নিয়ে শিক্ষামহলের একাংশের মধ্যে আপত্তি ওঠার কারণেই রাষ্ট্রপতি ভবন বিষয়টি নিয়ে নিশ্চুপ থেকে গিয়েছে। খড়্গপুর আইআইটির গবেষক অধ্যাপক শঙ্করকুমার নাথের নাম পরবর্তী উপাচার্য হিসেবে সামনে এলেও, তিনি বর্তমানে গবেষণার কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে আসতে পারছেন না বলেই জানা গিয়েছে। যার ফলে চলতি বছরে বিশ্বভারতী আর স্থায়ী উপাচার্য পাচ্ছে না বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই বিশ্বভারতীর পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর আমন্ত্রণ পেয়ে বিশ্বভারতীর বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বিনয়কুমার সোরেন দিল্লিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে বিশ্বভারতীর অচলাবস্থা কাটাতে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের আবেদন জানিয়ে এসেছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি রাষ্ট্রপতির হাতে বিশ্বভারতীর বিভিন্ন শিল্পকর্মের নিদর্শন তুলে দিয়ে এসেছেন এবং বিশ্বভারতী থেকে একটি সাংস্কৃতিক দল দিল্লিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার বিষয়ে আলোচনাও করে এসেছেন বলে জানা গিয়েছে।