• facebook
  • twitter
Thursday, 31 October, 2024

ইজরায়েলের সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলোকে  বয়কটের আহ্বান ১ হাজার লেখকের

একটি আইনি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ইউকে লয়ার্স ফর ইজরায়েল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ পোস্ট করে জানিয়েছে, ‘চিঠিটিতে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে এবং এর স্বাক্ষরকারীরা ইজরায়েলের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং অবৈধভাবে বয়কট করেছে।

ইজরায়েলের হামলায় যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্টাইন। ফাইল চিত্র

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এক হাজারের বেশি সাহিত্য ও বিনোদন শিল্পের ব্যক্তিত্ব এক বিবৃতিতে ইজরায়েলের সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করবেন না বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ইজরায়েল সরকার প্যালেস্তাইনের জনগণের ওপর যে দমনপীড়ন ও গণহত্যা চালিয়ে আসছে, তাতে সহযোগিতা করছে এসব সাংস্কৃতিক সংস্থা। যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকা গত সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে।

জনপ্রিয় লেখক যারা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে আইরিশ লেখক স্যালি রুনি, পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী আমেরিকান-লিবিয়ান ঔপন্যাসিক হিশাম মাতার, পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী ঔপন্যাসিক ভিয়েত থান নগুয়েন, বুকার পুরস্কার বিজয়ী অরুন্ধতী রায়, মহসিন হামিদ, বুকার পুরস্কার-মনোনীত অবনী দোশি। এই  লেখকরা ইজরায়েলি প্রকাশক, উৎসব, সাহিত্য সংস্থা এবং প্রকাশনাগুলোর সঙ্গে কাজ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রচারটি করেছিল প্যালেস্টাইন ফেস্টিভ্যাল অফ লিটারেচার (প্যালফেস্ট নামেও পরিচিত)। তাঁরা প্যালেস্তাইন জুড়ে শহরগুলোতে বিনামূল্যে পাবলিক ইভেন্টের সঙ্গে কাজ করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা লেখক, প্রকাশক, সাহিত্য উৎসবের কর্মী এবং অন্যান্য বইয়ের কর্মী হিসেবে এই চিঠিটি প্রকাশ করছি, যখন আমরা ২১ শতকের সবচেয়ে মারাত্বক নৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংকটের মুখোমুখি।’ এই চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ইজরায়েল গত অক্টোবর থেকে গাজায় ‘কমপক্ষে ৪৩ হাজার ৩৬‘ প্যালেস্তাইনের জনগণকে হত্যা করেছে এবং ইজরায়েল ‘৭৫ বছর ধরে বাস্তুচ্যুতি, জাতিগত নির্মূল এবং বর্ণবাদ’ অনুসরণ  করে যাচ্ছে। সংস্কৃতি ‘এই অন্যায়কে স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে একটি অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করেছে’ করছে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।

স্বাক্ষরকারীরা ইজরায়েলি প্রকাশক, উৎসব, সাহিত্য সংস্থা এবং প্রকাশনাগুলোর সঙ্গে কাজ না করার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন, যারা প্যালেস্তাইনের জনগণের অধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত এবং ইজরায়েলের দখলদারিত্ব, বর্ণবাদ বা গণহত্যাকে ন্যায্যতা দিয়েছে।

বিশ্বের এই প্রখ্যাত লেখকদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইনে প্যালেস্তাইনের জনগণের জন্য যে সুস্পষ্ট অধিকার লিপিবদ্ধ রয়েছে তাকে যেসব প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি দেয় না, সেসব প্রতিষ্ঠান বয়কটের তালিকায় থাকবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, অতীতে দক্ষিণ আফ্রিকার বহু বর্ণবাদবিরোধী লেখক একই রকম অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। কারণ বর্ণবাদী আচরণ ও লক্ষ লক্ষ মানুষকে শরণার্থীতে পরিণত করার বিষয়টি কোনো সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষ মেনে নিতে পারেন না। আইরিশ লেখক স্যালি রুনি একজন দীর্ঘদিন ধরে ইজরায়েলের সমালোচক। তিনি তাঁর ইজরায়েলি প্রকাশককে তাঁর বই হিব্রু ভাষায় অনুবাদ করার অনুমতি দেননি।

এদিকে একটি আইনি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ইউকে লয়ার্স ফর ইজরায়েল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ পোস্ট করে জানিয়েছে, ‘চিঠিটিতে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে এবং এর স্বাক্ষরকারীরা ইজরায়েলের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং অবৈধভাবে বয়কট করেছে।

পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাছে একটি বার্তায় ইউকেএলএফআই ইউকে ইকুয়ালিটি অ্যাক্ট ২০১০ এবং বিশ্বজুড়ে অন্যান্য বৈষম্যমূলক আইনের উল্লেখ করে বলেছে, ‘চিঠিটি ইজরায়েলিদের বিরুদ্ধে স্পষ্টভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ।’ ইউকেএলএফআই লিখেছে, ‘লেখকরা প্রকাশক, সাহিত্য সংস্থা বা অন্য কোনো জাতীয়তার প্রকাশনার ওপর অনুরূপ শর্ত আরোপ করেন না।’

এদিকে সাহিত্য ও বিনোদন শিল্পের বেশ কয়েকজন নোবেল বিজয়ী, পুলিৎজার পুরস্কার এবং বুকার পুরস্কার বিজয়ীসহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক বয়কটের একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।

চিঠিটি অলাভজনক সংস্থা ক্রিয়েটিভ কমিউনিটি ফর পিস (সিসিএফপি) প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি ইজরায়েলের সাংস্কৃতিক বয়কটের বিরুদ্ধে প্রচার অভিযান চালায়।
সিসিএফপি চিঠির স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন, লি চাইল্ড (জ্যাক রিচার উপন্যাসের স্রষ্টা), বুকার বিজয়ী হাওয়ার্ড জ্যাকবসন, পুলিৎজার বিজয়ী ডেভিড ম্যামেট, নোবেল বিজয়ী হার্টা মুলার ও এলফ্রিডে জেলিনেক, ইতিহাসবিদ সাইমন স্কামা ও সাইমন সেবাগ মন্টেফিওর, বিনোদনবিদ জিন সিমন, সিমন, অজি অসবোর্ন এবং ডেব্রা মেসিং।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা ইজরায়েলি এবং ইহুদি লেখক, প্রকাশক, লেখক এবং সাহিত্য সংস্থাগুলো বয়কট করার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করছি। এ ছাড়া যারা এই বয়কটের সমর্থন করে তাদের সঙ্গেও আমরা কাজ করব না। সাহিত্যিক সম্প্রদায়ের সদস্যদের দ্বারা তাদের সহকর্মীদের হয়রানি এবং বহিষ্কার করতে দেখে আমরা হতবাক ও হতাশ।’

সেখানে আরো বলো হয়েছে, ‘ইজরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন-মনোনীত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস এবং হিজবুল্লাহ বিরুদ্ধে অস্তিত্বের যুদ্ধে লড়াই করছে। যে কাউকে একতরফাভাবে ইজরায়েলের নিন্দা করা এবং তাদের বয়কট করা নৈতিকতার বিপরীত।’

তথ্য সূত্র: টাইমস অব ইজরায়েল, দ্য গার্ডিয়ান