স্লিপ ডিসঅর্ডার ব্রিদিং (এসডিবি) হল ঘুমের সময় বিশেষ করে বিঘ্নপ্রাপ্ত হওয়া শ্বাসকার্যের প্যাটার্ন। এটা তখন ঘটে থাকে, যখন কয়েক সেকেন্ডের জন্য শ্বাসকার্য একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এই ঘটনাকেই বলে স্লিপ অ্যাপনিয়া। এর লক্ষণ হল– খুব জোরে জোরে নাক ডাকা, ঘুম খুব পাতলা হওয়া, ঘুমে প্রশান্তির অভাব, দিনের বেলা ঘুমের ইচ্ছা তৈরি হওয়া ইত্যাদি। ঘুমানোর সময় শ্বাসকার্যের ক্ষেত্রে বায়ুপথে বাধা (অবস্ট্রাকশন)-র জন্য এই ঘটনা ঘটে থাকে।
বেশ কয়েক বছর ধরে স্লিপ অ্যাপনিয়া ও হৃদরোগের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে নানান সমীক্ষা চালানো হয়েছে। দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন স্থায়ী স্লিপ অ্যাপনিয়া হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। এটি প্রদাহ, ব্লাড ক্লটিং ইত্যাদির মাত্রাও বৃদ্ধি করে। এই সমস্ত কারণগুলির ফল হল উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং ব্রেন স্ট্রোকের মতো ঘটনা।
অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে, অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে, বিভিন্ন ধরনের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে যায়। এই সমস্ত পরিবর্তনগুলি হৃদযন্ত্র ও রক্তবাহের উপর প্রভাব ফেলে। এই সময়ে হৃদযন্ত্রের মধ্যে চাপ বেড়ে যায়। এর কারণে রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্রের গতিও বৃদ্ধি পায়।
অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ)-র সঙ্গে আরও একটি জিনিসের সম্পর্ক রয়েছে, তা হল ওবেসিটি। এটিকে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি ঝুঁকির কারণ হিসেবেও গণ্য করা হয়। স্লিপ অ্যাপনিয়া, ওবেসিটি ছাড়াও বিঘ্নিত ঘুমেরও একটি বড়ো কারণ। এর ফলে অস্বাস্থ্যকর জীবনশৈলী তৈরি হয় এবং দেহের মধ্যে নতুন করে ওবেসিটি’র প্রবণতা তৈরি হতে থাকে।
ঘুম-সম্পর্কিত শ্বাসকার্য ঘটিত রোগগুলির মধ্যে রয়েছে অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ) এবং সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া-সহ, চেইন-স্ট্রোক রেসপিরেশন (সিএসআর-সিএসএ) প্রভৃতি অসুখ। এগুলি সাধারণ ভাবে দেখা যায় কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিওর (সিএইচএফ) রোগীদের মধ্যে।
অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া-র কারণে অবশ্যই হৃদস্পন্দনের গতি অনিয়মিত হয়ে পড়ে। গবেষকরা তাঁদের গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, এএফ বা অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশনের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তোলে ওএসএ। এটি এমন একটি অবস্থা, যাতে অনিয়মিত ভাবে এবং প্রায় সময় দ্রুত হৃদস্পন্দনের ঘটনা ঘটে চলে। এর ফলে স্ট্রোক, হার্ট ফেলিওর এবং অন্যান্য শারীরিক জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। স্লিপ অ্যাপনিয়া রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এবং কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমের ওপরেও চাপ বাড়িয়ে তোলে।
নিয়মিত ব্যায়ামে প্রতিকার
দেহের ওজন কমে গেলে স্লিপ অ্যাপনিয়া’-র মাত্রা কমে যায়। আবার ব্যায়াম করার মাধ্যমে হৃদস্পন্দনের গতি ও রক্তচাপের মাত্রাও স্বাভাবিক করে ফেলা যায়। ২০ শতাংশ অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীরা ওবেসিটিতে আক্রান্ত নয়। তাদের ক্ষেত্রে শ্বাসযন্ত্রে বাতাস প্রবেশপথের অস্বাভাবিকতা বিশেষ চিকিৎসার মাধ্যমে করা যেতে পারে।