• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

আসিয়ান ও রােহিঙ্গা সমস্যা

মায়ানমারের সরকারকে রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে আসা ৭,৩০,০০০ রােহিঙ্গা শরণার্থীর দুর্দশার দায়িত্ব নিতে বলেছেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটেরেস।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা রিলিফ শিবির। (Xinhua/Jibon Ahsan/IANS)

ব্যাঙ্ককে আন্তর্জাতিক মহা সমারােহ ছাড়াও আসিয়ান শীর্ষ বৈঠকের সবচেয়ে জোরালাে বার্তাটা হল মায়ানমারের প্রতি রাষ্ট্রসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটেরেসের আবেদন। তিনি মায়ানমারের সরকারকে রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে আসা ৭,৩০,০০০ রােহিঙ্গা শরণার্থীর দুর্দশার দায়িত্ব নিতে বলেছেন। মায়ানমার সরকারকে মহাসচিব রােহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার ‘মূল কারণ’ খতিয়ে দেখতেও বলেছেন। সেই সঙ্গে তাদের মায়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।

রাষ্ট্রসংঘ তার প্রধানের মাধ্যমে রােহিঙ্গা মুসলিমদের আন্তর্জাতিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার কথা বলেছে, যে রােহিঙ্গারা অনেককাল ধরেই আশ্রয়ের সন্ধানে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছুটে বেড়াচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্পর্কে একটা অভিন্ন অবস্থান নেওয়ার জন্য অ্যাসােসিয়েশন অফ দ্য সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস অর্থাৎ আসিয়ানের নেতৃবৃন্দ বছরে একবার মিলিত হন। সেই সঙ্গে তারা একে অপরের বিষয়ে নাক না গলানাের নীতি অনুসরণ করেন। সদস্য মায়ানমার সম্পর্কে এই সংস্থা কোনও নীতিগত অবস্থান না নিলেও রাষ্ট্রসংঘ রােহিঙ্গা সমস্যাকে ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বৃহত্তম মানবিক সংকট’ আখ্যা দিয়েছে।

তবে রাষ্ট্রসংঘ মহাসচিবের বক্তব্য সংস্থার আলােচনার বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে। উদ্যোক্তা দেশ থাইল্যান্ড প্রকাশিত মহাসচিবের বক্তব্যে গােষ্ঠীর সর্বসম্মত অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছে। বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া ও তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানাের ব্যাপারে বাংলাদেশ যে বড় সমস্যার মধ্যে রয়েছে তা সরাসরি স্বীকার না করেও রাখাইন সংকট মােকাবিলার প্রস্রাব দেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে ইতিমধ্যেই যে বিভিন্ন চুক্তি হয়েছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় যাতে নতুন করে তাদের জীবন গড়ে তুলতে পারে তার জন্য একটা উপযােগী পরিবেশ গড়ে তুলতে ও বিবাদের মূল কারণগুলি মােকাবিলা করে একটা পুর্ণাঙ্গ ও স্থায়ী সমাধান খুঁজে বার করার প্রয়ােজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

গুটেরেস বলেছেন, শরণার্থীদের সঙ্গে আলােচনা ত্বরান্বিত করতে ও তাদের মধ্যে একটা আস্থা গড়ে তােলার জন্য মায়ানমার সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে শরণার্থীরা দ্বিধাহীনভাবে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যেতে পারে। কিন্তু মায়ানমার সরকার এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগও নেয়নি।

মায়ানমারে ব্যাপক হত্যালীলা প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। রাখাইন সংকট নিয়ে আসিয়ান সদস্যদের ভিন্ন ভিন্ন মনােভাব রয়েছে। এই গােষ্ঠীর ১০টি দেশের বেশিরভাগই একে অপরের ব্যাপারে নাক না গলানাের নীতিতে বিশ্বাসী, কিন্তু মুসলিম সংখ্যাধিক্যের দেশ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া রােহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক ব্যবহার সুনিশ্চিত করার জন্য আসিয়ানের অতি সক্রিয় ভূমিকার পক্ষপাতী।

বর্তমানে আসিয়ানের সক্রিয় ভূমিকা মুলত মানবিক সাহায্য দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আসিয়ান চায় মানবাধিকার লঙঘন ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য মায়ানমার সরকার একটা তদন্ত কমিশন গড়ুক। ফলে এই মুহুর্তে গুটেরেসের বক্তব্যের একটা যৌথ প্রতিফলন প্রয়ােজন।