দেবেন্দ্র ফড়নবিশের নেতৃত্বে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করা উচিত বিজেপি শিবসেনা জোটের, এমনটাই বললেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি। পাশাপাশি জানালেন, শিবসেনার সমর্থন পাবে তাঁর দল। এদিনই হঠাই নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের সদর দফতরে উড়ে যান গড়কড়ি। তিনি বলেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশকেই পছন্দ এবং তাঁর সরকারের নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
বিজেপি ১০৫টি আসন জিতেছে ফলে বিজেপিরই মুখ্যমন্ত্রী হওয়া উচিত। শিবসেনাকে আটকাতে সর্বসম্মত প্রার্থী হিসেবে তাঁর নামও ঘােরাফেরা করছে। জল্পনা নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় নীতিন গড়কড়ি বলেন, আমি দিল্লিতে আমার মহারাষ্ট্রে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। আজই মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কেশিয়ারির সঙ্গে দেখা করবে বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল।
গতমাসে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিজেপি ও শিবসেনা জোট, বিজেপি জেতে ১০৫টি আসনে এবং ৫৬টি আসনে পায় শিবসেনা। তবে ২৪ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই ৫০-৫০ ফর্মুলার দাবি জানিয়েছে শিবসেনা, আর তা নিয়েই থেমে রয়েছে মহারাষ্ট্রের সরকার গঠন প্রক্রিয়া, তাদের তরফে বলা হয়েছে এটি নিয়ে লােকসভা নির্বাচনের আগেই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে আলােচনা হয়েছে। সরকার গঠনের মাত্র ২৪ ঘন্টা আগে মেয়াদের অর্ধেক সময়ের জন্য তাদের তরফে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবির উল্লেখ করেছে পাশাপাশি সমানভাবে দফতর ভাগেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। বিজেপির তরফে বলা হয়েছে, পূর্ণ সময়ের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেই কাজ চালিয়ে যাবেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ।
নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘর প্রধান মােহন ভগবতের সঙ্গে দেখা করবেন নীতিন গড়কড়ি। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আরএসএস অথবা মােহন ভাগবতের কোনও ভূমিকা নেই, এবং কোনও সময়েই ছিল না।
সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ঘােরাফেরা করছে নীতিন গড়কড়ির নামও, শিবসেনার সঙ্গে জোট কাটাতে সেই পথেই হাঁটা হতে পারে। দেবেন্দ্র ফড়নবিশের ওপর খুবই অসন্তুষ্ট শিবসেনা, নির্দিষ্ট সময় অন্তর শিবসেনার মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি খারিজ করে দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার রাতে মােহন ভাগবতের সঙ্গে নীতিন গড়কড়ির বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে দলীয় সুপ্রিমাে উদ্ধব ঠাকরে এবং মােহন ভাগবতের সঙ্গে বৈঠকের তত্ত্ব খারিজ করে দিয়েছেন শিবসেনা সাংসদ এবং মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত।
নীতিন গড়কড়ির প্রতি তুলনামূলকভাবে নরম মনােভাব রয়েছে শিবসেনার এর আগে মহারাষ্ট্রে বিজেপি শিবসেনা জোট সরকারের মন্ত্রী ছিলেন তিনি, এবং শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরেরও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক রয়েছে গড়কড়ির। সপ্তাহান্তে সমস্যা মেটাতে গড়কড়ির হস্তক্ষেপ চেয়ে মােহন ভাগবতকে চিঠি লেখেন শিবসেনা নেতা কিশাের তিওয়ারি। চিঠি লেখা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন দু’ঘন্টার মধ্যে সমস্যার সমাধানে সক্ষম গড়কড়ি।
মহারাষ্ট্র সরকার গঠনের সময়সীমা শেষ হয়ে আসছে। এখনও অনড় দুই জোটশরিক শিবসেনা ও বিজেপি। একটি সূত্রের খবর শিবসেনা নেতারা আশঙ্কা করছেন শেষ মুহূর্তে বিজেপি তাঁদের কয়েকজন বিধায়ককে ভাঙিয়ে নিতে পারে। সে জন্য বান্দ্রা কুরলা অঞ্চলে একটি পাঁচতারা হােটেলে তাঁদের সরিয়ে রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে।
যদিও প্রকাশ্যে শিবসেনা বিধায়ক সঞ্জয় রাউত বলেছেন, মহারাষ্ট্রে কোনও দল ভাঙবে না। আমাদের বিধায়করা দলের প্রতি অনুগত। যাঁরা আমাদের বিধায়কদের নিয়ে গুজব রটাচ্ছেন তাঁরা যেন নিজেদের বিধায়কদের সামলে রাখেন। এর মধ্যে জানা যায় মাতৃশ্রীতে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের বাড়িতে দুপুরে বৈঠক শুরু হয়েছে। সেখানে উদ্ধব সিদ্ধান্ত নেবেন, বিধায়কদের হােটেলে রাখা হবে কিনা। যদিও সঞ্জয় রাউত সেকথা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, উদ্ধবজি বিধায়কদের সঙ্গে শিবসেনার পলিসি নিয়ে আলােচনা করবেন।
বিজেপি সুত্রে খবর, এদিন সন্ধ্যায় রাজ্যপাল ভগৎ সিং কেশিয়ারির সঙ্গে দেখা করবেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। শুক্রবারের মধ্যে সরকার গঠিত না হলে মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হবে। মঙ্গলবার ফড়নবিশের ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা সুধীর মুনগানতিয়ার বলেন, একটা সুখবর আছে। যাই ঘটুক কেন, বিজেপি সেনা জোটই সরকার গড়তে চলেছে।
অন্যদিকে সঞ্জয় রাউত বলেন, মুনগানতিয়ার আমাদেরও একটা সুখবর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শিবসেনা থেকে কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবেন। শিবসেনার দাবি তাঁদের পক্ষে ১৭০ জন বিধায়কের সমর্থন আছে। শিবসেনা একা এবার আসন পেয়েছে ৫৬টি। আর কোন দলের বিধায়করা তাঁদের সমর্থন করবেন সেকথা সঞ্জয় রাউত জানাননি। তাঁরা এনসিপি ও কংগ্রেসের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুই দলই তাঁদের নিরাশ করেছে।