ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে কলকাতা সহ উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে টানা চারদিন ধরে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বুধবার ও শনিবার হালকা বৃষ্টি হলেও মাঝখানের দুইদিন বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে ঝোড়ো হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। শহরে জারি হয়েছে কমলা সতর্কতা। সেজন্য কলকাতা পুরসভা ও রাজ্যের দমকল বিভাগ আগাম প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেই শহরের একাধিক জায়গায় গাছ ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জল জমতে পারে নিচু এলাকায়। ব্যাহত হবে বিদ্যুৎ পরিষেবা। বিঘ্নিত হতে পারে যান চলাচল ব্যবস্থা।
প্রসঙ্গত ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে তটস্থ উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দা, কৃষক ও মৎস্যজীবীরা। ইতিমধ্যে প্রশাসনিক স্তরে শুরু হয়েছে নানা পদক্ষেপ। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় একাধিক মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে মৎস্যজীবীদের ওপর। বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে যেসব এলাকা দিয়ে এই ঘূর্ণিঝড় প্রবাহিত হবে, সেইসব এলাকায় বাতিল করা হয়েছে দূরপাল্লার ট্রেনও। এছাড়া শিয়ালদহ থেকে হাসনাবাদগামী ট্রেন পরিষেবাও এই সময়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। এর প্রভাবে শহর কলকাতায় এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কতটা পড়তে পারে তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে যে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছিল, বুধবার সেই নিম্নচাপের জেরে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে দানার গতিবেগ ঘন্টায় ১৫ কিলোমিটার হলেও সেটা আরও শক্তি সঞ্চয় করতে চলেছে রাতের দিকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই এর গতিবেগ বেড়ে হবে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার। শহর কলকাতাতেও এই গতিবেগ থাকবে। তবে সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮০ কিলোমিটারেও পৌঁছতে পারে। এটি ২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবরের সকালের মধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আকার ধারণ করবে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন। ল্যান্ডফলের সময় এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার কাছাকাছি পৌঁছনোর সম্ভাবনা রয়েছে। মৌসম ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার দুপুরে এই ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র অবস্থান ছিল শহর কলকাতা থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণে। ক্রমশ তা এগিয়ে আসছে।
এর প্রভাবে বুধবার উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হলেও পরের দুইদিন ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতা সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। ব্যাপক বৃষ্টি হবে উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতেও। সেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কোথাও কোথাও ৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভারী বৃষ্টিপাতের পর শনিবারেও হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রশাসনিক স্তরে নেওয়া হয়েছে একাধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। বুধবার সকালেই কলকাতা পুলিশের তরফে মাইকে সতর্কতামূলক প্রচার করা হয়েছে। শহরবাসীকে দুর্যোগের সময়ে অযথা বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে। মোবাইল সহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম আগাম চার্জ দিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। দরকারি কাগজপত্র সুরক্ষিত রাখতে বলা হয়েছে। বিপদের সময়ে প্রয়োজনে প্রশাসনের ঘোষিত হেল্প লাইন নম্বরে ফোন করতে বলা হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে বারোটা থেকে এই হেল্পলাইন নম্বরগুলি চালু হয়ে যাচ্ছে। এই নম্বরগুলির মাধ্যমে লালবাজারের ‘ইউনিফায়েড কম্যান্ড সেন্টার’-এ সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে।
কলকাতা পুলিশের ঘোষিত এই হেল্পলাইন নম্বরগুলি হল —
৯৪৩২৬১০৪৩০,
৬২৯২২৬৩৪৪০,
৯৪৩২৬১০৪৫৫ এবং
৯৪৩২৬১০৪৪৫