অবশেষে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন উঠল। অনশনের ১৭ দিন পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নবান্নে প্রায় দু’ঘণ্টা বৈঠক শেষে সোমবার রাত ১০টার পর অনশন তুলে নেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে তাঁরা অবশ্য জানিয়েছেন, আরজি করের মৃতা তরুণী ডাক্তারের বাবা-মায়ের আবেদনেই তাঁরা অনশন তুলে নিলেন। সেই সঙ্গে তাঁরা এও জানিয়েছেন, তাঁদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ চলবে। আরজি করের ঘটনার ন্যায় বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা চালিয়ে যাবেন আন্দোলন। ইতিমধ্যে গণ কনভেনশনেরও ডাক দিয়েছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, গত ৯ আগস্ট আরজি কর হাসপাতালে চতুর্থ তলে সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার মৃতদেহ। কলকাতা পুলিশ এই ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেপ্তার করে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে। ১৩ আগস্ট হাইকোর্টের নির্দেশে এই ঘটনার তদন্তে নামে সিবিআই। এরপর থেকেই আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে বদলে যেতে থাকে কলকাতা শহর তথা রাজ্যের পরিস্থিতি। পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন সাধারণ নাগরিকরা। জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিবাদে এবং পদযাত্রায় শামিল হন জনসাধারণ থেকে অনেক বিশিষ্টজনও। রাজ্য সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠকেও মেলেনি কোনও সমাধান সূত্র। পুজোর ঠিক আগেই অনশনের কার্যসূচি ঘোষণা করেন জুনিয়র ডাক্তাররা এবং ধর্মতলায় মঞ্চ বেঁধে ১০ দফা দাবিতে তাঁরা শুরু করেন অনশন।
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী সবাইকেই উৎসবে ফেরার আহ্বান জানালেও জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়ে দেন, তাঁরা উৎসবে ফিরবেন না। সরকারের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হলেও কাটেনি জটিলতা। বরং আরও জোরালো হয়েছে তাঁদের আন্দোলন। গত ১৫ অক্টোবর রাজ্যের উদ্যোগে রেড রোডে যখন পুজোর কার্নিভাল চলছিল, সে সময় তাঁরা ডাক দিয়েছিলেন ‘দ্রোহের কার্নিভাল’-এর। এই আয়োজনের অনুমতি পুলিশ না দিলেও শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের অনুমতিতে তাঁরা এবং তাঁদের সঙ্গে অগণিত সাধারণ মানুষ মিলিত হন এই ‘দ্রোহের কার্নিভাল’-এ। ইতিমধ্যেই ‘রাত দখল’ থেকে ‘রাস্তা দখল’-এর মতো অভূতপূর্ব কর্মসূচিও দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে কলকাতা নগরের।
দফায় দফায় অনশনকারী চিকিৎকরা অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাঁরা অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেননি। মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিব অনশন মঞ্চে এসে সেখান থেকে ফোনের মাধ্যমে কথা বলিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের ২১ অক্টোবর, সোমবার বিকেল পাঁচটায় নবান্নে বৈঠকে ডাকেন। দীর্ঘ ২ ঘণ্টা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, একদিনেই সমস্ত দাবি পূরণ করা সম্ভব নয়। তাঁকে সময় দিতে হবে। তিনি তাঁদের সমস্ত দাবি ধৈর্য সহকারে শোনেন এবং অনশন তুলে নিতে আবেদন করেন। বৈঠক শেষে নবান্ন থেকে ধর্মতলায় অনশন মঞ্চে এসে জুনিয়র ডাক্তারেরা তাঁদের অনশন তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তাঁরা জানান, নির্যাতিতা তরুণী ডাক্তারের বাবা-মায়ের আবেদন মতো তাঁরা এই অনশন কর্মসূচি তুলে নিলেও তাঁরা তাঁদের প্রতিবাদ ও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন যতদিন না তাঁদের দাবি পূরণ হবে। বিশিষ্টজনেদের অনেকেই এবং সিনিয়র ডাক্তারদের একাংশও এই অনশন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পক্ষে ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই ১৭ দিন ধরে চলা এই অনশন প্রত্যাহারে স্বস্তির পরিবেশ ফিরেছে সমস্ত মহলেই। তবে মৃতা তরুণী চিকিৎসকের হত্যা কাণ্ডের ন্যায়-বিচার আসুক এবং অন্যান্য দুর্নীতিরও অবসান ঘটুক, সকলেই চাইছেন।