• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

শীঘ্রই ভারতে ডেঙ্গি ভ্যাকসিন, তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। 'দ্য ল্যানসেট' জার্নালের একটি সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে সারা বিশ্বে গত দুই দশকে দশগুন বৃদ্ধি পেয়েছে এর সংক্রমণ।

ডেঙ্গির প্রকোপ রোধ করতে ভারতের বাজারে খুব শীঘ্রই মিলবে ভ্যাকসিন। শুরু হয়েছে ক্লিনিকাল ট্রায়াল। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্বাসযন্ত্রের রোগ বিভাগের অধ্যক্ষ এবং এই প্রকল্পের প্রধান তদন্তকারী অধ্যাপক মহম্মদ শামীম বলেন, ‘ভারতে ডেঙ্গি ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের তৃতীয় ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। যারা টিকা নিয়েছেন তাদের দুই বছর পর্যবেক্ষণ করা হবে। তারপর বাজারে আসবে সিঙ্গেল ডোজ ডেঙ্গি ভ্যাকসিন।’

২০২৩ সালে ভারতে ২ লক্ষ ৮৯ হাজার ডেঙ্গি কেস সনাক্ত হয় এবং ৪৮৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। অন্যদিকে দেখা গেছে ২০২৪-এর ৩১ জুলাই পর্যন্ত, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা, ২০২৩ সালের এই সময়কালের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। ২০২৪-এ কেরালা এবং তামিলনাড়ুতে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গি কেস মেলে, তারপরে রয়েছে কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র এবং অন্ধ্রপ্রদেশ।

২০২৩-এর ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ৭৬ হাজারেরও বেশি ডেঙ্গির ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০২২ সালের রেকর্ড করা ৬৭,২৭১টি কেসের তুলনায় প্রায় ১০ হাজার বেশি৷ রাজ্যের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির মধ্যে হল, উত্তর ২৪ পরগণা, যেখান থেকে ৮ হাজার ৫৩৫টি ডেঙ্গি আক্রান্তের কেস সনাক্ত করা হয়েছে। কলকাতায় ৪,৪২৭টি, মুর্শিদাবাদে ৪,২৬৬টি, নদীয়ায় ৪,২৩৩টি এবং হুগলি থেকে ৩,০৮৩ জন ডেঙ্গি রোগী সনাক্ত করা হয়েছে।

জনস্বাস্থ্যের অন্যতম বড় সমস্যা হল ডেঙ্গি। গবেষকরা জানান, ডেঙ্গি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটি দেশীয় ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা ভারতের ক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হতে যাচ্ছে। এই উদ্যোগ ভারতের আত্মনির্ভরশীলতার ক্ষেত্রেও বড় পদক্ষেপ। অধ্যাপক মহম্মদ শামীম জানান, ‘বর্তমানে ভারতে ডেঙ্গির মোকাবিলা করতে কোনও অ্যান্টিভাইরাল বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত ভ্যাকসিন নেই।’ অধ্যাপক আরও জানান, ‘ভ্যাকসিন ট্রায়ালের ক্ষেত্রে আইসিএমআর এবং আংশিকভাবে প্যানসিয়া বায়োটেক পরীক্ষানিরীক্ষার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করছে। একটি টেট্রাভ্যালেন্ট ডেঙ্গি ভ্যাকসিন স্ট্রেন করা হয়েছে, যা নিয়ে বিভিন্ন স্তরে এখনও গবেষণা চলছে। এই ভ্যাকসিনের ফলাফল ডেঙ্গির চারটি সেরোটাইপের জন্যই ব্যবহারযোগ্য ছিল। এই স্ট্রেন ভারতের তিনটি কোম্পানিকে হস্তান্তর করা হয়, যার মধ্যে প্যানসিয়া বায়োটেকের গবেষণা সবচেয়ে উন্নত পর্যায়ে রয়েছে।‘

ভারতে প্রস্তুত ডেঙ্গির ভ্যাকসিন তৈরির পর পরই, প্রথম ও দ্বিতীয় ক্লিনিকাল ট্রায়াল হয়েছিল ২০১৮-১৯ সালের আগে। এর ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ- ভারতের সব ক’টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে ফেজ থ্রি ক্লিনিকাল ট্রায়ালের কাজে হাত লাগিয়েছে। প্যানসিয়া বায়োটেকের সঙ্গে একত্রে এই কাজ করছে আইসিএমআর।

এই ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে অংশ নিতে পারবেন ১৬ থেকে ৬০ বছর বয়স্ক মানুষ। তাদের নিজেদের নাম রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। ট্রায়ালের আগে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। একজনকে একটি টিকা দেওয়া হবে এবং তার পর্যবেক্ষণ চলবে ২ বছর ধরে। সারা দেশে ১৮টি জায়গায় এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল করা হচ্ছে। এতে অংশ নিচ্ছেন ১০ হাজার ৫৩৫ জন মানুষ।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘দ্য ল্যানসেট’ জার্নালের একটি সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে সারা বিশ্বে গত দুই দশকে দশগুন বৃদ্ধি পেয়েছে এর সংক্রমণ। আরও বলা হয়েছে ডেঙ্গি একমাত্র সংক্রামক রোগ, যার জন্য সারা বিশ্বে বার্ষিক মৃত্যুর হার বাড়ছে।