• facebook
  • twitter
Tuesday, 22 October, 2024

এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রীদের উদ্দেশে হুমকি জারি করলেন পান্নুন 

খালিস্তানি নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুন সোমবার এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রীদের উদ্দেশে হুমকি জারি করেছেন। সোমবার যাত্রীদের সতর্ক করে তিনি জানান, ১ থেকে ১৯  নভেম্বর পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে ভ্রমণ না করার জন্য। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে নাশকতা চালানো হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

খালিস্তানি নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুন সোমবার এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রীদের উদ্দেশে হুমকি জারি করেছেন। সোমবার যাত্রীদের সতর্ক করে তিনি জানান, ১ থেকে ১৯  নভেম্বর পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে ভ্রমণ না করার জন্য। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে নাশকতা চালানো হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। নিষিদ্ধ খালিস্তানপন্থী সংগঠন ‘শিখ ফর জাস্টিস’-এর এই নেতার হুমকি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়েছে। তবে কী ধরনের হামলা চালানো হতে পারে, তার কোনও উল্লেখ করেননি পান্নুন। গত বছর নভেম্বরেও একই রকম ভাবে এয়ার ইন্ডিয়া বিমানে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছিলেন পান্নুন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এবার সত্যিই কি কোনও হামলার ছক কষা হয়েছে ? 
 
এয়ার ইন্ডিয়া এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস দ্বারা পরিচালিত বিমান-সহ ভারতীয় যাত্রীবাহী জেটগুলির বিরুদ্ধে বোমার হুমকির পরে ফের এই হুমকি। গত সপ্তাহে ১০০ টিরও বেশি বিমানে হুমকি দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে অন্তর্দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ভারতীয় বিমানে বোমা হামলার হুমকি। গত সাত দিনে বোমাতঙ্কের ঘটনা ঘটেছে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, আকাসা এয়ারলাইন্সের একের পর এক দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিমানে। তবে এখনও পর্যন্ত এই সমস্ত হুমকি ভুয়ো হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ফের পান্নুনের হুমকি নতুন করে ভাবাচ্ছে কেন্দ্রকে।
 
পান্নুনের হুমকি ভারতে ‘শিখ গণহত্যার ৪০ তম বার্ষিকী’ কে লক্ষ্য করে -এমনটাই দাবি করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ভারতে শিখদের ওপর হামলার ঘটনার ৪০ বছর হতে চলেছে। ঠিক এই সময়ে দাঁড়িয়েই এমন এক হুমকি এল পান্নুনের তরফে। মনে করা হচ্ছে, শিখদের ওপর হামলার ঘটনার বদলা নিতেই এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে হামলা করতে পারেন তিনি এবং তাঁর অনুগামীরা।
 
পান্নুন খালিস্তান বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের একজন নেতা। খালিস্তানপন্থী সংগঠন ‘শিখ ফর জাস্টিস’ ভারতের পাঞ্জাবের বাইরে খালিস্তান নামে একটি স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তিনি একজন আইনজীবী এবং শিখস ফর জাস্টিসের প্রতিষ্ঠাতা। পান্নুন আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য একাধিকবার গণভোট এবং প্রচারের আয়োজন করেছেন। শিখ ফর জাস্টিস তাঁর নেতৃত্বে, খালিস্তানের স্বাধীনতার প্রচারের জন্য প্রায়ই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেছে, এবং পান্নুন নিজেও ভারতীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পান্নুনকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং হিংসাকে উসকে দেওয়া’ সংক্রান্ত কার্যকলাপের জন্য ২০২০ সালের জুলাই মাসে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের অধীনে ভারতের তরফে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে অভিহিত করা হয়েছিল। ভারত সরকার তার গ্রেপ্তারের জন্য একাধিক পরোয়ানাও জারি করেছে এবং ভারতে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্তও করা হয়েছে।
 
ভারত পান্নুনকে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে আখ্যা দেওয়া সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক আঙিনায় তিনি সক্রিয়। বিশেষ করে কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে তিনি খালিস্তান আন্দোলনের সমর্থনের জন্য প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। গতবছর মার্কিন গোয়েন্দারা পান্নুনকে হত্যার চক্রান্তের একটি নথি প্রকাশ করে। পান্নুনের একই সঙ্গে আমেরিকা ও কানাডার নাগরিকত্ব আছে। মূলত কানাডায় ঘাঁটি গেড়ে তিনি খালিস্তানপন্থী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করেন।

বোমা হামলার হুমকি নিয়ে এমনিতেই উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যেই অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক সেরেছে। আতঙ্কগ্রস্ত যাত্রীদের আশ্বস্ত করছে অসামরিক বিমান নিরাপত্তা সংস্থা ব্যুরো অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন সিকিয়োরিটি  তথা বিসিএএস। বিভিন্ন বিমান সংস্থার সঙ্গে বৈঠকের পর বিসিএএস-এর ডিরেক্টর জেনারেল জ়ুলফিকর হাসান যাত্রীদের আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, ভারতের আকাশসীমা সম্পূর্ণ নিরাপদ।  কোনও ভয় ছাড়াই বিমানযাত্রা করতে পারেন তাঁরা। তবে পান্নুনের হুমকি পর  কেন্দ্র কী পদক্ষেপ করছে তা এখনও জানা যায়নি।

উল্লেখ্য, গত বছর নভেম্বরে  সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি  ভিডিও  পোস্ট করে এয়ার ইন্ডিয়া বিমানে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছিলেন পান্নুন। সেই ভিডিও বার্তায় তাঁকে বলতে শোনা যায় , ‘১৯ নভেম্বর এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে চড়লে প্রাণের আশঙ্কা  আছে।’  ঘটনাচক্রে, ১৯ নভেম্বর ছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল।

সম্প্রতি খলিস্তানি জঙ্গি নেতা পান্নুনকে খুনের চক্রান্তের অভিযোগ দায়েরের ভিত্তিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, প্রাক্তন র-প্রধানকে তলব করেছে মার্কিন আদালত। এ বিষয়ে ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া, ‘এটি সম্পূর্ণভাবে অনধিকার চর্চা।’