ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের ‘আমরণ অনশন’ আন্দোলন চলছে। এরই মধ্যে সোমবার নির্ধারিত সময় বিকাল পাঁচটা থেকে নবান্নে শুরু হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠক। নবান্ন সভাঘরে এই বৈঠক শুরু হয়েছে। রাজ্যের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও রয়েছেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বাস্থ্য সচিব সহ রাজ্যের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা। এই প্রথম আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসক ও মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের বৈঠক সরাসরি বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সম্প্রচার করা হচ্ছে। আলোচনায় স্বচ্ছতা রাখতে রাজ্য সরকার স্বেচ্ছায় এই উদ্যোগ নিয়েছে। বৈঠকে রয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকদের ১৭ জন প্রতিনিধি। রয়েছেন ৫ মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি, বিশিষ্ট চিকিৎসকরা।
বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তাররা তাঁদের দাবি ও হাসপাতালের সমস্যাগুলি সমাধানে তাঁদের পরামর্শ এক এক করে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরছেন। জুনিয়র ডাক্তাররা এপর্যন্ত যা জানিয়েছেন, তার নির্যাস হল– তাঁদের দাবি, আর জি কর কাণ্ড প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার পরিণতি। সেজন্য কলেজ লেভেল মনিটারিং কমিটিতে জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধি রাখতে হবে। কমিটি সিলেক্টেড না হয়ে যেন ইলেক্টেড হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত হোক। কলেজ এবং স্টেট লেভেলে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকতে হবে। থ্রেট কালচারের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য কমিটি হোক। স্টেট টাস্ক ফোর্সে চিকিৎসকদের প্রতিনিধি বৃদ্ধি করার আর্জি। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যের লিখিত আশ্বাস চাই। অভিযোগ জানানোর মতো একটা জায়গা তৈরি হোক। জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি, থ্রেট কালচারের পাশাপাশি হাসপাতালগুলিতে যৌন হেনস্তাও চলে। মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনার স্বাভাবিক পরিবেশ নেই।
প্রথমে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি ও পরামর্শ শোনার পরেই রাজ্যের তরফে জবাবে প্রথমে মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা বলেন। মুখ্য সচিব জুনিয়র ডাক্তারদের দাবির সপক্ষে বলেন, টাস্ক ফোর্স, গ্রিভান্স সেল তৈরি করা হয়েছে। মার্চ, ২০২৫ –এর মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করার চেষ্টা চলছে। নির্বাচন হলে কমিটিতে জুনিয়র চিকিৎসকরা থাকতে পারেন। পাশাপাশি তিনি জানান, রাজ্য সরকার শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগের চেষ্টা করছে। নিয়োগে রাজ্য সরকারের কোনও অনীহা নেই। আইনি জটিলতা কাটলেই দ্রুত নিয়োগ করা হবে।
এরপর মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারের উদ্যোগের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। পাশাপাশি, কোথায় কী সমস্যা রয়েছে, এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে কী কী পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করতে চলেছে, তার বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন। তিনি এবিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন,’অনেক অধ্যক্ষ নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন না। যার ফলে ডায়মন্ড হারবারের মতো ঘটনা অনেক ঘটেছে। আর জি করের ৪৭ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।’ মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কোনও আলোচনা না করেই সাসপেন্ড কেন? অভিযোগ খতিয়ে না দেখেই সাসপেন্ড। এটা থ্রেট কালচার নয়?’
মমতা বলেন,’আমরা চাই তাড়াতাড়ি নিয়োগ হোক, বাইরের রাজ্যেও যদি কেউ থাকেন, তাঁদের জন্য আমাদের দরজা খোলা আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শেষ ২ বছরের খাতা দেখলে অনেক কিছুই বের হবে। পরীক্ষা যাতে স্বচ্ছভাবে হয়, তা লক্ষ্য রাখবেন মুখ্যসচিব। তোমাদের অনশন এবং ধর্মঘট তুলে নেওয়ার অনুরোধ করছি।’