মহারাষ্ট্র কি অবশেষে বিজেপির হাতছাড়া হতে চলেছে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনসিপি নেতার দাবিতে এমনই সম্ভানার কথা উঠে আসছে। ওই নেতার দাবি, শিবসেনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন দিতে রাজি হয়েছে শরদ পাওয়ারের দল। বাইরে থেকে সমর্থন দেবে বলে জানিয়েছে কংগ্রেস। পরিবর্তে তাদের দলের প্রতিনিধিকে দেওয়া হতে পারে অধ্যক্ষের পদ। তবে শিবসেনা বিজেপির সঙ্গে জোট ভাঙর সিদ্ধান্ত নেয় কি না, তার উপরই গােটা বিষয়টি নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এনসিপি-র নেতা আমাদের জানিয়েছেন, ‘১৯৯৫ সালে সেনা ও বিজেপি যে ফর্মুলায় জোট বেঁধেছিল, সেই প্রস্তাবই তুলে ধরা হয়েছে। সেই সময় সেনার প্রতিনিধি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। উপ-মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপির প্রতিনিধি। আমরা এবারও বলেছি, সেনার প্রতিনিধি মুখ্যমন্ত্রী হবেন এবং এনসিপির প্রতিনিধি হবেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী’।
বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ১০৫টি, শিবসেনা ৫৬টি, এনসিপি ৫৪টি ও কংগ্রেস ৪৪টি আসনে জিতেছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীত্ব নিয়ে তরজায় এখনও সরকার গঠন করতে পারেনি বিজেপি-শিবসেনা জোট। দু’পক্ষই নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়। ফলে আলাদাভাবে সরকার গঠনেরও তােড়জোড় শুরু হয়। বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। তৎপর শিবসেনা ও এনসিপিও। সােমবারই কংগ্রেস সভানেত্রী সােনিয়া গান্ধির সঙ্গে দেখা করেছেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার।
এদিকে, মঙ্গলবার ফের বিজেপিকে হুশিয়ারি দিয়ে শিবসেনা দাবি করেছে যে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হবেন তাদেরই দলের প্রতিনিধি। শিবসেনার রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় রাউত জানিয়েছে, ‘মুখ্যমন্ত্রী শিবসেনা থেকেই হবে। মহারাষ্ট্রের মুখ ও রাজনীতি বদলাচ্ছে। আপনারা যেটাকে হাঙ্গামা বলছেন, সেটা হাঙ্গামা নয়, ন্যায়বিচার ও অধিকারের লড়াই,… জয় আমাদের হবে’।
মহারাষ্ট্রে বিধানসভার ভােট পরবর্তী পনেরাে দিন কেটে গেলেও মুখ্যমন্ত্রী কে হবে তা চূড়ান্ত হল না। যদিও বিজেপি-শিবসেনা জোট সরকার গঠনের প্রয়ােজনীয় সংখ্যক আসন পেয়েছে। আর ভােটপূর্ব তাদের যৌথ সরকার গঠনের বিষয়টিও নিশ্চিত ছিল। কিন্তু ভােট পরবর্তী সংখ্যাতত্ত্বের রকমফেরে সবই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার শিবসেনার তরফে নেতা সঞ্জয় রাউত জানিয়েছেন, সেনার পক্ষে এনসিপির সঙ্গে যােগাযােগের কথা জানিয়ে বলেছেন, দুই দলের সমঝােতা হলে সেনাই মুখ্যমন্ত্রী পদ দখল করবে। শনিবার চলতি বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ভােট পূর্ব জোট গড়ে নির্বাচনে লড়াই করে বিজেপি যদি একাই শপথ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় তা জনগণ মেনে নেবে না বলে মব্য করেছেন সেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে।
শিবসেনার রাজ্যসভা সদস্য সঞ্জয় রাউত জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীত্ব নিয়ে যে লড়াই চলছে তা সেনার ন্যায্য অধিকার। মহারাষ্ট্রের রাজনীতির মুখ বদলে গিয়েছে। শরদ পাওয়ার এব্যাপারে সেনাকে সাহায্য করার কথা জানিয়েছেন। এদিন পর্যন্ত শিবসেনার মুখ্যমন্ত্রীত্ব ভাগাভাগির শর্ত বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মেনে নেয়নি। এদিকে দিল্লিতে সমস্যার জট খুলতে বিজেপি নেতা অমিত শাহ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশের সঙ্গে এবং বিপরীত পক্ষে এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার কংগ্রেস নেত্রী সােনিয়া গান্ধির সঙ্গে বৈঠক করেন।
তবে রাজনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এনসিপির সঙ্গে সেনার সমঝােতা হলেও কংগ্রেস শিবসেনাকে সরকার গঠনে সাহায্য করতে রাজি নয়। এদিকে সেনার সঙ্গে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য বিজেপির পক্ষে প্রবীণ নেতা নীতিন গডকড়ীকে মুম্বই পাঠানাে হচ্ছে।
শিবসেনার পক্ষে সঞ্জয় রাউত জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন সেটা দিল্লি ঠিক করতে পারে না। মহারাষ্ট্রেই বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে। তিনি জানান, সেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে রাজ্যে স্থায়ী সরকার চান। এজন্য শরদ পাওয়ারের সঙ্গে এবং অন্যান্য দলের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেছি। স্থায়ী সরকার গড়ার জন্যই আমরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছি।
সােনিয়া গান্ধির সঙ্গে বৈঠকের পর এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার সাফ জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের দায় বিজেপির। এনসিপি বা কংগ্রেস সরকার গড়ার দৌড়ে নেই। মঙ্গলবার বিকেলে সেনার পক্ষে সঞ্জয় রাউত ও রামদাস কদম রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে দলের অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। শিবসেনা সরকার গঠনে কোনওভাবেই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তাও জানানাে হয়েছে রাজ্যপালকে।
রাজনৈতিক সুত্রে জানা গিয়েছে, সময় যত এগিয়ে আসছে শিবসেনা ততই নমনীয় হচ্ছে। তারা এখন নাকি উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ পেলেই খুশি। তবে স্বরাষ্ট্র বা অর্থ দফতার পেতে চায় সেনা। কিন্তু ফড়নবিশ দুটি দফতরই আঁকড়ে থাকতে চান। কোনওটিই সেনাকে দিতে চান না। কারণ এই দুটি দফতরই তাে সরকারের চালিকা শক্তি।
সেনা এখন বিজেপির কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে বলছে, সিদ্ধান্ত ওদেরই নিতে হবে। শনিবারের মধ্যে সরকার গঠন না হয়ে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হতে পারে। অচলাবস্থা কাটাতে আবারও নির্বাচনে যেতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন পর্যটনমন্ত্রী জয়কুমার রাওল।