• facebook
  • twitter
Sunday, 20 October, 2024

স্থানীয়দের উপরই আস্থা, ৬ বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা তৃণমূল ও বিজেপির

তৃণমূলের লক্ষ্য স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখা

১৩ নভেম্বর বাংলার ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। কোন কেন্দ্রে কে প্রার্থী হবেন, সেই নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা চলছিলই। অবশেষে সেই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল তৃণমূল। শনিবারই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপিও। তার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল রাজ্যের শাসকদল। কোনও বড় মুখ নয়, বরং সংগঠনের লোকেদের উপরই ভরসা রাখল ঘাসফুল শিবির।

তৃণমূলের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, সিতাই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লড়বেন সঙ্গীতা রায়। মাদারিহাট কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পো, তালডাংরায় ফাল্গুনি সিংহবাবু, মেদিনীপুরে সুজয় হাজরা। হাড়োয়ায় তৃণমূলের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন শেখ রবিউল ইসলাম এবং নৈহাটি থেকে লড়বেন সনৎ রায়।
হালিশহরের ছেলে তৃণাঙ্কুর বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তৃণমূলের ছাত্র সংসদের সভাপতিও বটে। নৈহাটি বিধানসভার উপনির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে তাঁকেই বেছে নেওয়া হতে পারে বলে দীর্ঘদিন ধরে গুঞ্জন চলছিল দলের অন্দরে। তবে সেই আশায় জল! তৃণাঙ্কুরের পরিবর্তে নৈহাটিতে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হল তৃণমূলের স্থানীয় টাউন প্রেসিডেন্ট সনৎ দে-কে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। তাই সনৎ দে-ই এখন ঘাসফুলের ভরসা। প্রসঙ্গত, নৈহাটির বিধায়ক ছিলেন পার্থ ভৌমিক। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুর আসন থেকে জিতে আপাতত তিনি সাংসদ। তাই নৈহাটিতে উপনির্বাচনের সিদ্ধান্ত।
মেদিনীপুরের প্রার্থী সুজয় হাজরা। প্রথম থেকেই তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছিল, মেদিনীপুর বিধানসভা আসনে প্রার্থী করা হতে পারে সুজয় হাজরাকে। তিনি বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি পদে রয়েছেন। মাঝে অবশ্য শোনা যাচ্ছিল, মেদিনীপুরের প্রার্থী হতে পারেন তৃণমূল মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদারও। তবে সবটাই জল্পনা। পাল্লা ভারী ছিল সুজয় হাজরার দিকেই। সেই মতোই সুজয় হাজরাকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিল তৃণমূল। তবে জুন মালিয়া যখন মেদিনীপুরের বিধায়ক ছিলেন তখন সুজয়ের সঙ্গে তাঁর বিবাদ তুঙ্গে উঠেছিল। পরে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁরা বিবাদ মিটিয়ে নেন। লোকসভা নির্বাচনে জুন মালিয়ার হয়ে প্রচারেও দেখা গিয়েছিল সুজয়কে।
হাড়োয়ার প্রার্থী বাছাই নিয়ে সবথেকে বেশি জলঘোলা চলছিল। কারণ হাড়োয়া বিধানসভা আসনের দাবিদার সবথেকে বেশি ছিল। এই বিধানসভার শেষ বিধায়ক ছিলেন হাজি নুরুল ইসলাম। চব্বিশের লোকসভা ভোটে জয় পেয়ে তিনি বসিরহাটের সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন। কিন্তু গত ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি প্রয়াত হয়েছেন। তাই বসিরহাট লোকসভার পাশাপাশি হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রও ফাঁকা। সেই মতোই হাড়োয়ায় উপনির্বাচনের সিদ্ধান্ত। তবে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে এখনই উপনির্বাচন হচ্ছে না।
হাড়োয়া কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে অনেকেই ছিলেন। প্রথমেই তালিকায় নাম ছিল প্রয়াত সাংসদ হাজি নুরুলের দুই পুত্র। বড় ছেলে আনারুল ইসলাম এবং মেজো ছেলে রবিউল ইসলাম। অন্যদিকে কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কন্যা প্রিয়দর্শিনী হাকিমকে হাড়োয়ার প্রার্থী করা নিয়েও আলোচনা চলছিল তৃণমূলের অন্দরে। তবে সেই জল্পনা উড়িয়ে হাজি নুরুলের পুত্র রবিউল ইসলামকেই হাড়োয়ার প্রার্থী হিসেবে বেছে নিল তৃণমূল।
প্রসঙ্গত, ৬টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৫টি কেন্দ্রই রয়েছে তৃণমূলের মুঠোয়। শুধুমাত্র মাদারিহাট বিধানসভা কেন্দ্রই ছিল বিজেপির পকেটে। তবে এবার তৃণমূলের লক্ষ্য, ছয়ে ছয়। কারণ আরজি কর কাণ্ডের আবহে বিরোধীদের ‘চাপে’ পড়ে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে তৃণমূল। তাই  বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই উপনির্বাচনই এখনও তৃণমূলের কাছে বড় পরীক্ষা। ‘দ্রোহকালে’ প্রশ্ন বার বার উঠেছে, লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পাওয়া তৃণমূলের কি ‘চাপ’ বেড়েছে? জনসমর্থনেও কি ভাটা পড়েছে? এরই মাঝে তৃণমূলের সামনে রয়েছে একাধিক চ্যালেঞ্জ। বিশেষ জনসংযোগ এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ধরে রাখাই এখন রাজ্যের শাসকদলের কাছে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও এই নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয় ঘাসফুল শিবির। উপনির্বাচনে ৬টি বিধানসভা আসনেই জয় আসবে, এই আত্মবিশ্বাসের উপর ভর করেই এগিয়ে চলেছে তৃণমূল।
অন্যদিকে শনিবারই ৬ কেন্দ্রে উপনির্বাচনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বিজেপি। বিজেপির প্রার্থী তালিকায় বড় কোনও নাম নেই। মূলত স্থানীয়দেরই প্রার্থী করেছে গেরুয়া শিবির। সেলিব্রিটি মুখ বা বড় কোনও নামের বদলে এবার সংগঠনের লোকের উপর ভরসা রেখেছে বঙ্গ বিজেপিও। কোচবিহার জেলার সিতাই কেন্দ্রে প্রার্থী হচ্ছেন দীপককুমার রায়।  আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাটে প্রার্থী করা হয়েছে রাহুল লোহারকে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাড়োয়া কেন্দ্রে বিজেপি টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিমল দাস। এই জেলারই নৈহাটি কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছে রূপক মিত্রকে। অন্যদিকে মেদিনীপুর কেন্দ্রে বিজেপি টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন শুভজিৎ রায়। অনেকেই মনে করেছিলেন এই কেন্দ্রে টিকিট দেওয়া হতে পারে প্রাক্তন সাংসদ তথা বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। তবে শেষমেশ তৃণমূলের সুজয় হাজরার বিপক্ষে বিজেপির টিকিটে লড়বেন শুভজিৎ রায়। বাঁকুড়া জেলার তালডাংরা কেন্দ্রে বিজেপি টিকিট লড়বেন অনন্যা রায় চক্রবর্তী।
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মাদারিহাটে জয়লাভ করেছিলেন বিজেপির মনোজ টিগগা। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি আলিপুরদুয়ার থেকে সাংসদ হিসেবে মনোনীত হওয়ায় এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে। রাজ্যে ৬ কেন্দ্রের মধ্যে একমাত্র এই আলিপুরদুয়ার কেন্দ্র নিয়েই কিছুটা চাপে রয়েছে শাসকদল তৃণমূল।