• facebook
  • twitter
Sunday, 8 September, 2024

অরণ্যে এক আয়না

মৃদুলকান্তি দে চুয়াত্তর মিটার লম্বা যোগীঘাট সেতু একবার এপার-ওপার হেঁটে কাছের একমাত্র রেস্তোঁরার সামনে রাখা গার্ডেন ছাতার তলায় এসে বসল তিমির৷ চোখে সানগ্লাস৷ সে একা, অরণ্য পাহাড়ের সৌন্দর্য তার সঙ্গিনী৷ এভাবে ভাবতে ভালবাসে তিমির৷ পায়ের উপর পা রেখে চায়ের বড় কাপে চুমুক, অনেকটা জায়গা ছেড়ে পাশে পাহাড়৷ আবার কাছেই সেতুর তলা গ’লে আঁকাবাঁকা জল বইছে৷

মৃদুলকান্তি দে

চুয়াত্তর মিটার লম্বা যোগীঘাট সেতু একবার এপার-ওপার হেঁটে কাছের একমাত্র রেস্তোঁরার সামনে রাখা গার্ডেন ছাতার তলায় এসে বসল তিমির৷ চোখে সানগ্লাস৷

সে একা, অরণ্য পাহাড়ের সৌন্দর্য তার সঙ্গিনী৷ এভাবে ভাবতে ভালবাসে তিমির৷ পায়ের উপর পা রেখে চায়ের বড় কাপে চুমুক, অনেকটা জায়গা ছেড়ে পাশে পাহাড়৷ আবার কাছেই সেতুর তলা গ’লে আঁকাবাঁকা জল বইছে৷ এরকম পর্যটকপ্রিয় স্থান মায়ায় জড়ানো, জানা কথা৷ গাড়ি থামিয়ে বেড়াতে আসা নারী-পুরুষ এখানে কিছুক্ষণ বাসনার তৃপ্তি মেটাবে, মোটেই ভুল না৷

একটু আগে তিমির কমলা লেবুর বাগান শিটং ঘুরে এসেছে৷ ফলাবনত কুয়াশা এখনও যেন হাতে লেগে রয়েছে৷ ঝিরিঝিরি হাওয়ার আদর, গাছের অফুরন্ত কমলার সুরম্য শোভার মাধুরী মেশানো প্রকৃতি থেকে চোখ সরানো রীতিমতো কঠিন৷ তবু তিমির দৃষ্টি সরিয়েছিল৷

শাড়ির রঙ গায়ের সঙ্গে মিশে গিয়েছে৷ এই নারী পরম সুন্দরী, শুধু এইটুকু বলার মধ্যে আবেগ অনেকটা কম৷ হলুদ পশ্চাৎপটের স্বর্ণাভ রূপ পুরুষটির সানগ্লাস ঢাকা দৃষ্টিতে অগ্নু্যৎপাত ঘটিয়ে দিয়েছে৷ সে চোখ সরাতে পারছে না কিছুতেই৷ গাড়ি থেকে এক যুবক নেমে এল, রেস্তোরাঁয় অপরূপার পাশে বসে চা আর স্ন্যাক্স চাইল৷ ওরা দু’জন স্বামী স্ত্রী৷ নিজেদের মধ্যে কথা বলছে, পাহাড়ি নদীর মতো নারীর স্নিগ্ধ হাসি টালমাটাল করে দেয় রোদ৷ খাবারের বিল মিটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে যুবক-যুবতী৷ যোগীঘাট সেতুর উপর দাঁড়িয়ে রেলিঙে ঝুঁকে নীচে প্রবাহিনী জলধারা দেখছে দু’জন৷

তিমির সেই দিকে তাকিয়ে৷ পুরনো অ্যালবামের পাতা কমলা লেবুর মতো মনের চিত্রপটে ঝুলে রইল৷ আচ্ছা, অপরূপা কি পাহাড়ি জলধারার টানে সেতুর তলায় নেমে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে গোড়ালি থেকে বেশ উঁচুতে শাড়ি তুলে পা ভেজাবে৷ গমরঙ লাবণ্য রেণুর মতো ছড়িয়ে পড়ুক, ভেসে যাক৷

ভেসে গেল না৷ ওরা গাড়িতে উঠল, তারপর দু’জন পাহাড়ের বাঁকে অন্তর্হিত৷ রেস্তোঁরার উপরে দ্বিতল হোমস্টে৷ বড় অক্ষরে লেখা৷ একা তিমির সেতুর উপরে গিয়ে দাঁড়াল৷ সিগারেট ধরালো৷

দু’বছর আগের কথা৷ নাম বলেছিল, শ্রীরূপা৷ আপনি কিন্ত্ত আমাকে রূপা বলেই ডাকবেন৷ মনে পড়বে না কেন? বিকেলে প্রথম দেখা তিন হাত দূরে৷ অপরূপা দরজা খুলে সোজা চোখের দিকে যেই তাকাল, ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা তিমির দাশগুপ্তর অন্তর্লোক সহসা চমকে উঠল৷ দাউপানি হোমস্টে পাশাপাশি দুটো ঘর নিয়ে৷ ভুটিয়া বস্তির ভিতর৷ উচ্চতা ছয় হাজার ফুট৷ পিছনের দরজা খুললেই সরু ব্যালকনি৷ আর দূরে দার্জিলিং পাহাড় আলোক মালায় সাজানো৷ মনে হবে, স্বপ্নপুরী৷ অন্তবিহীন দেখার তৃষ্ণা, চলতেই থাকে৷ দেখা ফুরোয় না৷ যেন শূন্যতার শরীরে অজস্র আলো ফূটে আছে মায়াবী শেষ বিকেলে, আকারে-প্রকারে সীমাহীন৷

আরেক আরম্ভ দেখার প্রয়োজনে, হঠাৎ দূর গগনতলের আলো উদ্ভাসিত পাহাড় দেখার তৃষ্ণা মিটে গেল৷ আমরা যোগীঘাট সেতুর পটচিত্রে যাকে অপরূপা বলে এসেছি, সে-ই শ্রীরূপা৷ কুলুকুলু নদীর প্রবাহ থেকে অ্যালবামের এক একটি পৃষ্ঠা উঠে আসছিল, মনে পড়ছিল তিমিরের৷ কে বলে মানুষের টানটান শিরদাঁড়া দেখা যায় না! তিমির দেখেছিল, ছুঁয়ে ছিল৷ ঋজু শিরদাঁড়ার নগ্ন পিঠে চুম্বন মাখনের মতো গ’লে পড়েছিল৷ শ্রীরূপা বলেছিল হাসির ঝরনা বা ভেজা ঠোঁটে অনুরাগ ফুটিয়ে, ‘টি-টোয়েন্টির খেলা আধ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করা চাই৷ নো এক্সট্রা টাইম৷ ও এসে পড়লে কিন্ত্ত মুখ দেখাতে পারব না৷’

তিমির বলেছিল, নগ্নতার এমন ফ্রি-হিট, আহ, কী মধুময়, রূপা৷ আমি ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে দিলাম, আধ ঘণ্টা পেরোতে দেব না৷

‘হাতের মোয়া পেয়েছেন নাকি! শরীরের চাওয়া-পাওয়াটুকুই বিনোদন, ব্যাস৷ কাঠ-কয়লার মতো পোড়া কলঙ্ক আমি একদম নিতে পারি না৷ ওই যে বললেন ‘ফ্রি হিট’, এই কনসেপ্ট ক্রিকেট মাঠ ছাড়া চারপাশের ভাবনায় তেমন নেই৷’ শ্রীরূপা নিজে কী চায়, বোঝাল৷

এক কামরার দুটো ঘর গা লেগে, সামনের দরজা বন্ধ৷ পিছনের ব্যালকনি সংলগ্ন দুটো ঘরের দরজা খোলা৷ ব্যালকনির পর পাহাড়ের ঢাল নেমে গেছে তলদেশে৷ হোমস্টে বাড়িটার পিছন দিক থেকে ব্যালকনি ডিঙিয়ে ঘরে ঢুকবে কেউ, সম্ভব নয়৷

তিমিরের ঘরে শ্রীরূপা এসেছিল৷ বলেছিল, ভ্রুপল্লবে স্তব্ধ ইশারা, ‘আলোছায়ার খেলা যতই রঙ পাল্টাক, সময় তিরিশ মিনিট৷ সান্ধ্য দার্জিলিং সাক্ষী রেখে বলুন, ইয়েস রাজি৷’

সে তো নিরীহ তুলির রঙ নয়, বহ্নিশিখার রকমারি কাঁপন৷ আধ ঘণ্টা পূর্ণ হতেই শ্রীরূপা বলেওছিল, ‘এত সুখানুভূতি ফুরিয়ে যাবে যখন, আবার ভীষণ একা লাগবে, তিমির৷ আশেপাশে প্রকৃতির স্পর্শ পেতে আনমনে হেঁটে বেড়াচ্ছে— মাই হাবি৷ এই ফিরে এল বলে৷ বিটলস-এর জর্জ হ্যারিসন আপনার কাছাকাছি যায়? চেহারায়! আপনি অবশ্য নাম শোনেন নি৷ ওকে৷ গুড বাই৷’

পরিধানের বস্ত্র এক এক করে গায়ে চাপিয়ে শ্রীরূপা ব্যালকনির করিডর মুহূর্তে পেরিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে গিয়েছিল৷ যেন বিছানা শয্যায় কিছু ঘটেনি৷ পরদিন নীরব ভোরে চলে গিয়েছিল হোমস্টে ছেড়ে শ্রীরূপা৷ বলা যায়, লাগেজ সমেত৷

আজ শ্রীরূপা কি চিনতে পারেনি, তিমির তেমন দূরে ছিল না৷ তবে চোখে সানগ্লাস ছিল৷ যোগীঘাট সেতু থেকে নেমে তিরতির নদীর জলে ভেজা পাথরে তিমির যেন শ্রীরূপার খোলা শরীরের ঘ্রাণ পেল৷ আসলে দু’বছর আগের সেই সন্ধ্যাকালীন আধ ঘণ্টা পেখম তুলেছে৷ শ্রীরূপাকে দেখার পর৷

তিমির রেস্তোরাঁয় এসে কফি চাইল, ক্যাপাচিনো৷ আমেজ ভরা আবেশে চুমুক দিল৷ নিজের মনেই বলে উঠল, নাইস৷ এই উচ্চারণ এক বয়োবৃদ্ধের কানে পৌঁছুলো৷ উনি কাছে এসে বললেন, ‘ইউ লাইকড ইট, ইটস আওয়ার প্লেজার৷ জেন্টলম্যান, ইউ হেইল ফ্রম হোয়্যার!’
‘গুয়াহাটি সিটি৷’

খুশির টানে বৃদ্ধ তক্ষুনি বলে উঠলেন, সেখানে রেলওয়ে স্টেশনের ক্যাটারিং সার্ভিসে আমি অনেকদিন ছিলাম৷ ইন ফ্যাক্ট, দার্জিলিং রেলওয়ে স্টেশনের ডিপার্টমেন্টাল ক্যাটারিং আশির দশকে বন্ধ হয়ে গেল৷ তখন আমাদের তেরো জন কর্মীকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দিল৷ আমাকে পাঠালো গুয়াহাটি৷

চোখ থেকে সানগ্লাস সরাল তিমির৷ কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললে, ‘আমার বাবা রেলওয়ে অডিট ডিপার্টমেন্টে চাকরি করতেন৷’ তিমির যেটা বলল না, সেটা হ’ল, বাবার কাছ থেকে সে শুনেছিল কেন দার্জিলিঙ রেলওয়ে স্টেশনে ডিপার্টমেন্টাল ক্যাটারিং সার্ভিস উঠে যায়৷ শুরুর প্রথম বছর থেকে লোকসান হচ্ছিল৷ প্রথমত, দার্জিলিং প্রান্তিক স্টেশন৷ দ্বিতীয়ত, সারা বছর ভৌগোলিক কারণে যাত্রীদের ভিড় হতো না৷ তৃতীয়ত, দিল্লির রেলওয়ে বোর্ড ডিপার্টমেন্টাল ক্যাটারিং ওখানে রাখার পক্ষপাতি ছিলেন না, বার্ষিক লোকসানের বহর বেড়েই যাচ্ছিল৷

কফির উষ্ণতা শ্রীরূপার দৈহিক উষ্ণতার স্বাদ ধরে রাখার উইনডো, তিমির পুরনো দিনে ফিরতে চায়৷ সে আবার সানগ্লাস পরে নেয়৷ তার শরীরে শ্রীরূপার স্পর্শ মানে তুমুল ঝঙ্কার৷ কামসুখ ছাড়া মুহূর্তকাল তার কাছে অস্তিত্বহীন, নিজের ভুল হচ্ছে জেনেও সে নাচার৷

‘তুমি কোথায় থাকবে, ইয়ং ম্যান?’ ক্যাশ কাউন্টার থেকে উঠে এসে বৃদ্ধ জানতে চাইলেন৷
‘ঠিক করিনি৷’ নিস্পৃহ উত্তর৷ আসলে তিমির শ্রীরূপার সঙ্গের যুবকটির উপর ঈর্ষা-রাগ পোষণ করে আছে৷ তিমির ভালোভাবেই জানে, সঙ্গের যুবকটি শ্রীরূপার বিবাহিত পুরুষ৷ দাউপানি হোমস্টে থেকে চলে যাওয়ার সময় এক পলক দেখে নিয়েছিল৷

‘একটা রুম আমাদের খালি আছে৷ তুমি থাকতে পারো৷’
দোতলায় ঘর দেখল তিমির৷ জানালা থেকে বাইরে তাকালে চারদিক চিত্তে দোলা দিয়ে যায়৷ তার পছন্দ হলো৷ এই ফ্লোরে দুটো ঘর৷
তিমির জানতে চাইল, ‘পাশের ঘরে লোক আছে?’

‘বুকিং রয়েছে৷ পার্টি এসে দেখা করে গেল৷ তাগদার অর্কিড বাগান দেখে ওরা ফিরবে৷ তাগদায় ছোটবেলায় আমরা থাকতাম৷ বাবা ফৌজি ছিলেন৷ ব্যারাকে থাকতেন৷ আমার বোন ওখানে প্রাইমারি হেলথ সেন্টারে কাজ করেছে৷’

তিমির গাড়িটা হোমস্টে-র পার্কিং এরিয়ায় রেখে ট্রলি ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে উঠে গেল দোতলায় নিজের ঘরে৷ বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল৷ গিজার চালিয়ে গরম জলে স্নান করল৷ নিয়মিত জিম চর্চায় শালতরুর সৌষ্ঠব চেহারায় দীপ্র৷ আয়নায় নিজের শরীর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিল তিমির৷

যোগীঘাট ব্রিজ থেকে নেমে শ্রীরূপা তিরতির জলশব্দে পাথরের উপর এক পা রেখে অন্য পা ভিজিয়েছিল৷ পুরনো অ্যালবামের পাতা যেন আয়নার সামনে রাখা অজস্র মেডেলের বাক্স৷ দেখছে, পুরনো সন্ধ্যার সব ক’টা ফ্রেম মনে পড়ছে৷ এই রমণী সেইদিনের দাউপানির সঙ্গিনী! এক অদ্ভুত স্বপ্নময়তায় তিমির প্রবিষ্ট৷
অতীতে যা ঘটেছে, সেটা যেন আজ ঘটতে পারে৷ যেন সেদিনের বিছানাশয্যা আজ তিমিরের হাতের মুঠোয়৷ এই মুগ্ধতার প্রতি মমত্ব ক্রমশ দানা বাঁধছে, আধিপত্য ছড়িয়ে দিচ্ছে তার প্রতিটি রোমকূপে৷ সে হোটেল রুমে নতুন জামা কাপড় পরে নেমে এল৷ কাউন্টারের কাছে দাঁড়িয়েছিল রেস্তোরাঁর বৃদ্ধ মালিক কুনাল তামাং৷ —এক কাপ চা, টোস্ট ওমলেট৷

যে গার্ডেন ছাতার নীচে শ্রীরূপাকে দেখে মেঘ ডেকেছিল নীল আকাশে, সেই চেয়ারে গিয়ে বসল তিমির৷ বৃদ্ধের পুত্র এবং পুত্রবধূ ব্রেকফাস্ট দিয়ে গেল টেবিলে৷ একটু পর বৃদ্ধ তামাং এসে জানতে চায়, দুপুরে কী খাবে? চিকেন! সঙ্গে রাইস চাপাটি…

মায়াবী স্বপ্নভ্রমণ তিমিরকে ছাড়ে না৷ তার অনুসন্ধান, যারা এই হোটেলে তার পাশের ঘরটায় থাকবে তারা কি এই ছাতার নীচে এসে বসেছিল এবং কফির অর্ডার দিয়েছিল!

সেদিন আধ ঘণ্টার মেলামেশা, প্রথাসিদ্ধ ভালবাসা মোটেই নয়৷ নিসর্গ সৌন্দর্য বরং ঘনীভূত হয়েছিল অচেনা এক জোড়া হূদয় বৃত্তে৷ অরণ্যের সৌন্দর্য থেকে গিয়েছে, হূদয়ের টান অবলুপ্ত৷ নিত্যকার যাপনে কেউ সেভাবে মনে রাখেনি কাউকে৷ সেটাই স্বাভাবিক৷ সেদিন কি প্রাণের ছোঁয়া ছিল? উঁহু, রিপুর তাড়না ছিল৷

দুপুর গড়িয়ে বিকেল৷ তামাং জানাল, ওরা লামাহাট্টার একটি হোমস্টে পেয়ে সেখানে রাত্রি যাপন করবে৷ প্রকৃতির প্রাণস্পন্দন যত নিবিড় হচ্ছে, এই অরণ্যে আবার শ্রীরূপাকে দেখে নারীর নগ্নতা পেতে তিমির উম্মাদ হয়ে গিয়েছে৷ তার কামসুখ ডানা মেলে তাকে উড়িয়ে নিয়ে চলল৷

সেও লামাহাট্টা যাবে৷ দ্রূত গাড়ি চালিয়ে দূরত্ব পেরলে, শ্রীরূপার শরীরের প্রতিটি গন্ধ রজনীগন্ধার ঘ্রাণের মতো তার নাকে এসে লাগবে৷ সে ঠিক জানতে পারবে, শ্রীরূপার ঝিলমিল চোখ পাইন বনে কী খুঁজছে৷ তিমির ভেবে নিয়েছে সে কাছে দাঁড়ালে আদরণীয় সুরে নারী বলে উঠবে, আধ ঘণ্টা৷ সেদিন যেমন৷

অরণ্যে আঁধার নেমেছে৷ রাস্তার দু’পাশে অরণ্য, জঙ্গলভূমির ঢাল নেমে গেছে কোথাও৷ তার শিহরন আছড়ে পড়ল কল্পলোকের বিছানায়৷ পাহাড়ি বাঁক৷ অকস্মাৎ এক ঝাঁকুনি৷ গাড়ি চুপ, নিথর৷ তিমির নীরব৷ মনে কী কোলাহল ছিল, এখন নিস্তব্ধ৷ তার অন্তঃপুর অবশ৷ কাম-কামনার নবাবিয়ানা মুহূর্তে মুছে গেল৷
নিষ্পাপ অরণ্যে একটি চিতাবাঘ৷ গাড়ির হেডলাইট নেভানো৷ এক পা এগোল চিতা৷ গা ছমছম সুন্দর অরণ্যে এই দুর্লভ দৃশ্য তিমির দেখবে কি, ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করল৷ তার কেন জানি মনে হ’ল, নিঝুম অরণ্যে কামতৃষ্ণার লোলুপতা ভীষণ বিপদ ঘটাতে পারে, টের পাচ্ছিল শহুরে যুবক তিমির৷